‘উদার আকাশ আল্লামা ড. মুহাম্মদ ইকবাল স্মৃতি পুরস্কার’ এ ভূষিত হলেন বরেণ্য লেখক ও বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ জনাব মহিউদ্দিন সরকার। এই পুরস্কারের অর্থমূল্য ভারতীয় মুদ্রায় ১ লক্ষ ১ টাকা। ‘ইসলামের পরিচয়’ নামক গ্রন্থটির জন্যই মহিউদ্দিন সরকার ওই পুরস্কারে ভূষিত হলেন।
২৬ জানুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার সন্ধ্যায় ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার (সেন্ট্রাল পার্ক, সল্টলেক) প্রেস কর্নারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে ওই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এদিন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এই শতাব্দীর সেরা কবি ও পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সভাপতি সুবোধ সরকার।
উদার আকাশ পত্রিকার ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা সংখ্যা উদ্বোধন করলেন সেই প্রখ্যাত কবি সুবোধ সরকার। বিশিষ্ট লেখক দেবাশিস পাঠক ও উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ কবি সুবোধ সরকার-এর হাতে উদার আকাশ আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪৩০ তুলে দেন।
এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন সাংসদ ও জনপ্রিয় লেখক ড. মইনুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ ও পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, বিশিষ্ট লেখক দেবাশিস পাঠক, কবি এমদাদুল হক নূর, লেখক মুরারী শংকর বিশ্বাস, পুলিশ আধিকারিক মণিরুল ইসলাম সরকার, সাহিত্যিক মোশারফ হোসেন, শামসুল আলম, উদার আকাশ পত্রিকার সহ সম্পাদক মৌসুমী বিশ্বাস, রাইসা নূর, গ্রাফিক ডিজাইনার শ্যামল মজুমদার প্রমুখ৷ অনুষ্ঠানের শুরুতে সোমঋতা মল্লিকের পরিচালনায় কাজী নজরুল ইসলামের দেশাত্মবোধক সংগীত ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ ও ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ অপূর্ব সুন্দর পরিবেশন করেন অর্ধ শতকণ্ঠে ‘ছায়ানট’-এর শিল্পীরা। এদিন ‘ভাঙার গান’ ক্যালেন্ডার ‘ছায়ানট’-এর পক্ষে কবি সুবোধ সরকার-এর হাতে তুলে দেন সোমঋতা মল্লিক। এদিন কবিতা পাঠ করেন প্রতিভাবান কবি আলমগীর রহমান। আবৃত্তি করেন প্রখ্যাত বাচিক শিল্পী ড. পিনাকী চট্টোপাধ্যায়।
এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানটির অন্যতম উদ্দেশ্য দুই বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতির জোয়ারকে একই গতিতে ধাবমান করে তোলা। উল্লেখ্য, উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক, কবি ফারুক আহমেদ তাঁর বর্ণিল কর্মমুখর জীবনে দুই বাংলার সাহিত্য অঙ্গনে এক সমৃদ্ধির ধারাকে বেগবান করে তুলতে সর্বদাই বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছেন বিগত তেইশ বছর ধরে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রীর এই বন্ধনকে আরও জোরদার ও মধুর করে তুলতে ফারুক আহমেদ ও তাঁর প্রকাশনী উদার আকাশ এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন দুই বাংলার সাহিত্যপ্রেমীরা৷
উল্লেখ্য, দুই বাংলার মাঝে সুস্থ ধারার সাহিত্যচর্চার এই রোডম্যাপ তৈরি করে নিতে ফারুক আহমেদ সর্বদাই নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছেন।
ফারুক আহমেদ বলেন, “উদার আকাশের প্রতি পাঠকের এই ভালোবাসা আমায় আপ্লুত করেছে। সংস্থাকে আগামী দিনে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টার ত্রুটি করব না।” তিনি আরও জানান, বইমেলার প্রেস কর্নারে এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মহিউদ্দিন সরকারকে উদার আকাশ আল্লামা ইকবাল স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত করা হল।
এই অনুষ্ঠানমঞ্চে উদার আকাশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হল মহিউদ্দিন সরকার-এর লেখা মূল্যবান পুস্তিকা ‘হজ গাইড’, এদিন সমস্ত অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মহিউদ্দিন সরকার-এর পুরস্কারপ্রাপ্ত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইসলামের পরিচয়’, দেবাশিস পাঠকের প্রবন্ধ সংকলন ‘পুরোটাই বিতর্কিত’, অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী এবং সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ রায় সম্পাদিত ‘কিছু কিছু কথা’ গল্প সংকলন, দুটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ সংকলন ড. আবুল হাসনাত-এর ‘ত্রয়ী’ এবং ‘কালের প্রহরী’, মুরারীশংকর বিশ্বাসের ভ্রমণকাহিনি ‘ঘুরে এলাম আফ্রিকা’ এবং ‘দেবভূমি হিমাচল দর্শন ও নাগাল্যান্ড-মণিপুর ভ্রমণ’, তৈমুর খানের ‘সর্বনাশের ডায়েরি’, ড. সা’আদুল ইসলামের ‘শতবর্ষে বিদ্রোহী’, সুবিদ আলি মোল্লার ‘খোলা জানালা’, সুফি মহঃ বাবর আলির আধ্যাত্মিক ভাবনায় রচিত ‘গুলবাগিচা’, ডাঃ কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাসের ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’, কবি রবীন্দ্রনাথ রায়ের ‘সেদিন আসবে কবে’ কাব্যগ্রন্থ।
বিশিষ্ট লেখক ড. মহঃ শামসুল হকের ‘মীর মোশাররফ হোসেনের সাহিত্য সাধনা ও উনিশ শতকের নবজাগরণ’ ড. কুতুবউদ্দিন বিশ্বাস-এর কাব্যগ্রন্থ ‘বাংলা ইসলামী কবিতা’, সামজিদা খাতুন-এর ‘জীবন ও প্রত্যাশা’, সামিমা মল্লিক-এর ‘মন ছুঁয়ে যায়’ সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। আলপনা বিশ্বাস বসুর কবিতার বই ‘বৃতি’, হাবিবুর রহমান-এর ‘তালপুকুর গল্পমালা’ সহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন দুই বাংলার সেরা কবি সুবোধ সরকার, আহমদ হাসান ইমরান, ড. মইনুল হাসান, সোমঋতা মল্লিক প্রমুখ।
কবি সুবোধ সরকার প্রবীর ঘোষ রায়-এর ‘আজে বাজে পদ্য’ ও সুব্রতা ঘোষ রায়-এর ‘তুমি কখন আসবে সুদর্শন’ বইদুটিরও আবরণ উন্মোচন করেন।
প্রধান উদ্বোধক কবি সুবোধ সরকার তাঁর ভাষণে বলেন, উদার আকাশ বাংলা প্রকাশন-জগতে এর মধ্যেই একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছে এবং আগামী দিনেও এই পত্রিকা ও প্রকাশনের উজ্জ্বল উপস্থিতি ও উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি প্রায় অবধারিত বলা চলে।
মহিউদ্দিন সরকার তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে সর্ব-ধর্ম-সমন্বয় এবং বিশ্ব-মানবতার চিরন্তন বিশ্বাসকে তুলে ধরেন।
আহমদ হাসান ইমরান মাইকেল মধুসূদন দত্তের দ্বিশতবর্ষ যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য সাহিত্যানুরাগী সমস্ত মানুষ তথা সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে অনুরোধ জানান। তিনি তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ ‘প্রফেট মুহাম্মদ সাঃ জীবনচরিত বনাম সমালোচনা যৌক্তিকতা’ তুলে দিলেন কবি সুবোধ সরকার এবং মঞ্চে উপবিষ্ট সকল অতিথিদের হাতে।
সভার সভাপতি ড. মইনুল হাসান এদিন শুরুতেই উদার আকাশ প্রকাশনের পুরস্কার প্রদান ও গ্রন্থ প্রকাশ নিয়ে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, সাহিত্য সংস্কৃতির সেবায় উদার আকাশ পাঠক দরবারে সমাদৃত হয়েছে এবং বিশেষ দাগ কেটে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ আজকের প্রেস কর্ণারে উপচে পড়ার মতো মানুষের আগমন মুগ্ধ করে। লেখক মুরারীশংকর বিশ্বাস তাঁর মূল্যবান ভ্রমণের বইটি বইমেলার সেরা গ্রন্থ এবং কেন দামি গ্রন্থ সে বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। এদিন সমস্ত লেখক ও অতিথিদের সম্মাননা প্রদান করা হয় উদার আকাশ প্রকাশন ও উদার আকাশ পত্রিকার পক্ষ থেকে। প্রথমেই অতিথিদের হাতে স্মারক তুলে দেন উদার আকাশের পক্ষে রাইসা নূর ও প্রতিকৃতি চট্টোপাধ্যায়।
আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় ‘উদার আকাশ’-এর স্টল নম্বর ১৮৩। মুক্ত মঞ্চের পাশে ১ ও ২ নং গেটের কাছেই ‘উদার আকাশ’ স্টলে পাঠক ও বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে। বই-প্রকাশ ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে প্রেস কর্নার মাতিয়ে তুলল বইমেলায় ‘উদার আকাশ’। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটিকে সমৃদ্ধ করলেন সাহিত্য ও প্রকাশনা জগতের বহু লেখক, প্রকাশক ও সম্পাদক। সকলের বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান অনুষ্ঠানটিকে সফল করে তোলে। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি-সঙ্গীত পরিবেশন করেন মধুর কণ্ঠে কবি জুলেখা সুলতানা।