ঢাকা : মতিঝিল (কেন্দ্রীয়) সরকারী বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (Motijheel Central Government Boys and Girls High School) এর ৬৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আগামী ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি-২০২৫। দুই দিনব্যাপী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে। মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠেয় এ পুনর্মিলনীর জন্য রেজিষ্ট্রেশন চলছে।
আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মতিঝিল বয়েজ হাই স্কুলে খোলা রেজিস্ট্রেশন বুথে নাম রেজিস্ট্রেশন করা করা যাবে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রেজিষ্ট্রেশন বুথ খোলা থাকে।
পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে একটি তথ্যবহুল স্মরণিকা ও একটি ডায়রেক্টরি প্রকাশিত হচ্ছে। মতিঝিল (কেন্দ্রীয়) সরকারী বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তণ ছাত্র ছাত্রী সমিতির উদ্যোগে পুনর্মিলনীটি আয়োজন করা হচ্ছে।
ইতিপূর্বে এই স্কুল প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর উপলক্ষ্যে ২০০২ সালে প্রাক্তণ ছাত্রদের নিয়ে প্রথমবার পুনর্মিলনী আয়োজন করে মতিঝিল (কেন্দ্রীয়) সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তণ ছাত্র সমিতি। ৪৮ বছর উপলক্ষ্যে একই ব্যানারে ২০০৫ সালে দ্বিতীয়বারও শুধু প্রাক্তণ ছাত্ররা পুনর্মিলনীতে অংশ নেন। ২০০৭ সালে ৫০ বছর উপলক্ষ্যে সুবর্ণ জয়ন্তীতে আয়োজিত তৃতীয় পুনর্মিলনীতে প্রাক্তণ ছাত্রদের সঙ্গে প্রাক্তণ ছাত্রীরাও অংশ নেন। সে সময় সংগঠনের নামের সঙ্গে স্কুলের নামে
বালকের সঙ্গে বালিকা এবং প্রাক্তণ ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রী শব্দটি যুক্ত করা হয়। গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে আয়োজক সংগঠনটির নামকরণ করা হয় নতুন করে মতিঝিল (কেন্দ্রীয়) সরকারী বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তণ ছাত্র ছাত্রী সমিতি।
এরপর থেকে আয়োজিত পুনর্মিলনীগুলোতে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা এক সঙ্গেই অংশ নিচ্ছেন। এই ধারাবাহিকতায় ৫৪ বছর উপলক্ষ্যে ২০১১ সালে চতুর্থবার, ৫৮ বছর উপলক্ষ্যে ২০১৫ সালে পঞ্চমবার এবং ৬০ বছর উপলক্ষ্যে হীরক জয়ন্তীতে ২০১৮ সালে ষষ্ঠবার পুনর্মিলনী আয়োজন করে মতিঝিল (কেন্দ্রীয়) সরকারী বালক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তণ ছাত্র ছাত্রী সমিতি।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান আমলে সরকার পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার মানোন্নয়নে মতিঝিল সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট বয়েজ ও গার্লস হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। গণতন্ত্রের মানসপুত্র ও পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৭ সালে এই স্কুলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবং মতিঝিল সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে দুটি ভিন্ন নামে দু’টি স্কুলে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করছে।
এই স্কুলের প্রাক্তন কীর্তিমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ ও বিএনপি নেতা ড. আব্দুল মঈন খান, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আব্বাস, ঢাকার সাবেক ডেপুটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এ.এফ.এম ইউসুফ হায়দার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট সালমা ইসলাম । ড. আব্দুল মঈন খান এই মতিঝিল সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে ১৯৬২ সালে মেট্রিকে সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এই স্কুলের অপর ছাত্র আশীষ কুমার কীর্ত্তনীয়া ১৯৮২ সালে এসএসসিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
পাকিস্তানের দুইজন দ্রুততম মানবী ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশসেরা এথলিট কোয়েল ও রওশন আখতার ছবি ছিলেন সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুলের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃতি এথলিট হামিদা বেগম, সাবেক মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়ন শাবানা পারভিন নিপা, অভিনয় শিল্পী শিমুল ইউসুফ, কন্ঠশিল্পী শাকিলা জাফর(শাকিলা শর্মা), রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসী এই স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারোত্তোলক উইং কমান্ডার (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর পরিচালক ও দেশসেরা ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, চ্যানেল আই এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এর অন্যতম উদ্যেক্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত মজুমদার বাবু, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম, নেপাল কাঠমুন্ডু সাফ গেমস জয়ী বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ডিফেন্ডার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্লু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারিরীক শিক্ষা বিভাগের উপ পরিচালক আবু ফয়সাল আহমেদ, রাজনীতিবিদ ও গণসংহতি আন্দোলন নেতা জোনায়েদ সাকি, রাজনীতিবিদ ও জামায়াতে ইসলামী নেতা মাসুদ সাঈদী, বিবিএস কেবলস লিমিটেড এবং ইনডিগো মার্বেল এন্ড গ্র্যানাইট লিমিটেডের এমডি ইঞ্জিনিয়ার বদরুল শামিম, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের নির্বাচক ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার এহসানুল হক সিজান, ফিডব্যাকের লিড ভোকাল শাহনূর রহমান লুমিন এই মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।
এছাড়াও অনেক সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সা’দ জগলুল আব্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম দুদু সহ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের রণাঙ্গনের অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা, জুলাই আগস্ট বিপ্লব-২০২৪ এর অনেক সমন্বয়কারী, আহত সহযোদ্ধা এই স্কুলের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী।