ঢাকা: আগামী বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবির বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে একমত সমমনা বিভিন্ন দল ও জোট। তারা মনে করে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এতে নানা ষড়যন্ত্র এবং যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়ানো যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এমন কোনো কর্মসূচিতে আপাতত না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল শনিবার ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বিগত দিনে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে এই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু অংশ নেন।
বৈঠকের পর নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, জনগণের নানা সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আমরা মতবিনিময় করেছি। এসব জোট ও দল নিয়ে বিএনপি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করেছে। এর প্রয়োজনীয়তা এখনও ফুরিয়ে যায়নি।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা জোট ও দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর কোনো সিদ্ধান্ত হলে তা গণমাধ্যমকে পরে জানানো হবে।’
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আগামী দিনের কর্মসূচি কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচন কোন সময়ে হতে পারে, সে বিষয়ে নেতাদের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এসব জোট ও দলের নেতারা জানান, সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ২০২৫ সাল অতিক্রম করতে পারে না। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসররা আরও শক্তি সঞ্চয় করে গভীর ষড়যন্ত্র করবে। এতে দেশ ও জাতির বড় ক্ষতি হবে।
বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে নেতারা বলেন, সরকারের মধ্যেই কোনো সমন্বয় নেই। এতে শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় থাকা উচিত এবং নির্বাচন ইস্যুকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব জোট নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দেশকে নিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থেমে নেই। তারা যে কোনো উপায়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এমন সময়ে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সবাইকে আরও কৌশলী হতে হবে, আরও সংযমী হতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিতে কোনো বিভক্তি আনা যাবে না। এই সরকারকে নির্বাচন আয়োজনের সময় দিতে হবে। তবে সেটা যৌক্তিক হতে হবে। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিভেদ নয়, আলোচনার টেবিলকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
বৈঠকে যুগপৎ কোনো কর্মসূচিতে না গিয়ে নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১২ দলীয় জোটের মোস্তফা জামাল হায়দার ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতৃত্ব দেন সমন্বয়ক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। বাংলাদেশ লেবার পার্টির নেতৃত্বে ছিলেন দলটির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান।