ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনে মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সংস্কারের প্রশ্নে আমাদের জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলতে হবে। এলক্ষ্যে যদি আমাদের অবস্থানে কিছুটা ছাড়ও দিতে হয়, সেই ছাড় দেয়ার প্রস্তুতিও আমাদের রাখতে হবে। তিনি বলেন, ঐক্যের কথা বললে বুঝতে হবে কি কি বিষয়ে ঐক্য চাই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ঐক্য প্রয়োজন, রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য ঐক্য প্রয়োজন, তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা রাষ্ট্র পরিচালনায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ঐক্য প্রয়োজন। জনগণকে সম্পৃক্ত করেই মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে।
শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন’ শ্লোগানে এবং “ঐক্য কোন পথে” শিরোনামের জাতীয় সংলাপ ২০২৪ এর সংলাপ অধিবেশন ১ এ বক্তৃতাকালে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা সংস্কারের বিষয়ে একমত হলে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নাই। কি কি সংস্কার প্রয়োজন, কে করবে, কত দিনে করবে, কিভাবে তা কার্যকরী হবে, আগামী দিনগুলোতে সে সিদ্ধান্তগুলো আমাদের নিতে হবে।
এবার সংস্কারে পিছপা হলে চলবে না। আমাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে, যাতে সংস্কারে জনমতের প্রতিফলন দেখতে পাই। জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও কঠিন হবে। কারণ মানুষের প্রত্যাশার সাথে আমাদের যদি গ্যাপ থেকে যায় তাহলে বারে বারেই আমরা রাজনৈতিক অস্বস্তি ও জটিলতার মধ্যে পড়বো।
উপদেষ্টা বলেন, শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই না, এ পরিবর্তনের দায় ও দায়িত্ব আমাদের সকলকেই নিতে হবে। কাগজে কলমে সংস্কার করে দিয়ে গেলে হবে না, সংস্কারটির চর্চা করতে হবে যাতে মানুষ এর সুফল পায়। কেবল নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়ে গেলেই সব কিছুতে পরিবর্তন হয়ে যাবে না। সেটা কি সম্ভব যতক্ষণ পর্যন্ত না মনোজগতে পরিবর্তন না আসে। আমাদের এই উপলব্ধির জায়গাটা তৈরি করতে হবে যে, আমরা কেউই আসলে ক্ষমতায় যাই না, দায়িত্বে যাই। দায়িত্ব পালন করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ক্ষমতা প্রয়োগে জনগণের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। ঐক্য কোন পথে, এটা যদি জিজ্ঞাসা করেন, আসলে সংস্কারের যে প্রয়োজন আছে এটা আমরা সকলে স্বীকার করে নিয়েছি। ঐক্যের পথ বন্ধুর, এখানে সকলের কথা শুনেই আমাদের ঐক্যের পথে যেতে হবে। সংস্কারের প্রয়োজন স্বীকার হলেও কোন কোন পথে লাগবে, কতদিনে হওয়া সম্ভব জরুরি। তিনি বলেন, ছকে ফেলা রাজনীতি বদলানোর বা বৈষম্যহীনতা দূর করার যাত্রা সহজ হবার নয়। এ যাত্রায় খুবই কঠিন রাস্তার উপর দিয়ে আমাদের যেতে হবে। আমাদের ধৈর্য্যটা রাখতে হবে।প্রথাগতভাবে চলে আসা বিষয়গুলো একদিনে শেষ হবে না।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আমি সব সময়ই আস্থাশীল ও আশাবাদী। বড়ো ধরনের পরিবর্তন সেটা তারুণ্যই আনতে পারবে। কারণ তারাই নতুন করে ভাবতে শিখেছে। তারাই একটা জিনিসকে নতুন চশমা দিয়ে দেখতে শিখেছে। কিন্তু নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে তাও কিন্তু ঠিক না। পরিবর্তনটা একটা প্রক্রিয়া, কেবল আইন করে দিলেই হবে না। এই প্রক্রিয়া যাতে চালু থাকে এজন্য আমাদের নিজেদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। এখানে তারুণ্যের যেমন ভূমিকা আছে, অভিজ্ঞতারও একটা ভূমিকা থাকবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমি আশাবাদী এ সরকার দায়িত্ব নিয়ে যে কাজগুলো করছে, সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট পাওয়ার পরই আমরা পাবলিক এনগেজমেন্টে চলে যাবো। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ঐক্যমতের জন্য একটা কমিশন গঠন করা হবে। সংস্কারটি করতে পারলে যারা ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন তাদের জন্য অনেক ভালো হবে। বিদ্যমান রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ও ভালো হবে, ভবিষ্যত তরুণ নেতাদের জন্যেও ভালো হবে। কারণ তখন আমরা জানতে পারবো জনগণের প্রত্যাশা কি, এবং কোন প্রত্যাশার বিপরীতে ডেলিভারি কিভাবে দিতে হবে। ঐক্যের পথটা সরল না, ঐক্যের পথটা আঁকাবাকাই হবে, কঠিনই হবে। কিন্তু আমাদের বদ্ধ পরিকর হতে হবে যেনো জনগণের আশার প্রতিফলন আমরা ঘটাতে পারি।