ঢাকা, ডেক্স : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বকেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারকে খাদ্য নিরাপত্তা “স্বপ্ন প্রকল্প ফ্যামিল কার্ড” প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, পরিবারের মা বা গৃহিণীর নামে “স্বপ্ন প্রকল্প ফ্যামিল কার্ড” কার্ড প্রদান করা হবে। রাষ্ট্রের পক্ষে সকল নাগরিক পর্যায়ক্রমে কার্ডটি পাবে। প্রাথমিকভাবে গ্রাম-জেলা পর্যায়ের সুবিধা বঞ্চিতরা এর আওতায় আসবেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ চার জন এই বিবেচনায় এটা বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন, এলাকার সকলেই এর প্রাপক বিধায় কোন প্রকার দলীয় বা স্থানীয় প্রভাবে কাউকে বঞ্চিত করার সূযোগ থাকবে না। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর একটি অংশ এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য এর প্রবর্তন হলেও পরবর্তীতে সকলেই এর প্রাপক হবেন।
সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলা পুরাতন স্টেডিয়ামে গণসমাবেশ ও আন্দোলনে শহীদ পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুম-খুন, হামলায় আহত ক্ষতিগ্রস্ত ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ননা তুলে ধরেন গণসমাবেশে। বিকেল ৩ টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১২টার আগে থেকেই মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। কিশোরগঞ্জ সদর, অষ্টগ্রাম, ইটনা, কটিয়াদী, ভৈরব, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, তাড়াইল, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, কুলিয়ারচর, মিঠামইন, নিকলী এলাকার নেতাকর্মীরা হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান প্রতিকৃতি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে গণসমাবেশে যোগ দেন। এ সময়ে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা পুরাতন স্টেডিয়াম।
তারেক রহমান বলেন, আজকে আমরা সকলে এই মাঠে একত্রিত হয়েছি, মুক্ত পরিবেশে কথা বলছি, ভয়হীন পরিবেশে আমরা কথা বলছি। আজকে মঞ্চে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা শুনেছি, স্বজন হারানো মানুষের বক্তব্য শুনেছি। যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন তাদের সম্মান শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আজকে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি। ভয়হীন এই পরিবেশ তৈরি করার জন্য বিগত ১৭ টি বছর এদেশের মানুষের অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই পরিবেশটির জন্য দেশের মানুষকে ত্যাগ করতে হয়েছে। সংগ্রাম করতে হয়েছে, প্রতিবাদ- প্রতিরোধ করতে হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কিশোরগঞ্জ জেলাতে ১৭ জন মানুষকে হারিয়েছি, যারা আত্মত্যাগ করেছেন এই দেশের মানুষের অধিকারের জন্য। ১৬ জন মানুষ আছেন যারা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যারা ভয় পাননি। আন্দোলন সংগ্রামে বাংলাদেশে হাজারো মানুষ শহীদ হয়েছেন, যার আত্মত্যাগ করেছেন ১৫-১৬ বছর ধরে। বিশেষ করে গত জুলাই-আগস্ট মাসে শত শত ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এর বাহিরে বহু মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিএনপির ৬০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। বহু মানুষ অত্যাচারিত হয়েছে নির্যাতিত হয়েছে। এত মানুষ শহীদ হয়েছেন, এত মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন, এত মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন, কেন এই মানুষগুলো আত্মত্যাগ করলেন, কেন শহীদ হলেন, এই মানুষগুলো বাংলাদেশের মানুষের সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। আজকে আমরা যে মুক্ত পরিবেশে কথা বলছি এরকম মুক্ত পরিবেশ তারা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার বাংলাদেশের মানুষকে আবদ্ধ করে রেখেছিল। বাংলাদেশের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গুলির সামনে নিজেদের বুক পেতে দাবি আদায় করতে হয়। এদেশের মানুষ বারবার প্রমান করেছে স্বৈরাচারীর শাসন মেনে নিতে রাজি নয়। ৭১ সালে যেমন লক্ষ্য লক্ষ্য শহীদের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল তেমনি রক্ত দিয়ে ৫ আগস্ট মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য স্বৈরাচারকে বিদায় দিতে সক্ষম হয়েছি। এই আত্মত্যাগ আমাদের ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ নতুন প্রত্যাশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভবিষ্যতের জন্য তাকিয়ে আছে অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে সেই প্রত্যাশা প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচারী পতন হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হওয়ার পরেও স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশে রয়ে গেছে। আমরা বারবার বলছি বহু মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময় যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকারকে ব্যর্থ করতে দেওয়া যাবে না।
কিশোরগঞ্জ জেলাকে একটি সম্ভাবনাময় এলাকা বলে আখ্যায়িত করে তারেক রহমান বলেন, আজকে কিশোরগঞ্জের সমাবেশে অধিকাংশ মানুষ কিশোরগঞ্জের। ২-৪ জন অন্য এলাকার থাকতে পারেন। কিশোরগঞ্জকে সম্ভাবনা হিসেবে কিভাবে গড়ে তুলতে দুই একটা সম্ভাবনার ক্ষেত্র তুলে ধরতে চাই। ভোরো মৌসুমে আপনাদের এখানে প্রচুর ধান হয়। আপনারা কি জানেন আপনারা যে ধান উৎপাদন করেন তা সমগ্র বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ ধান উৎপন্ন হয় কিশোরগঞ্জে। যদি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয় কৃষক ভাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তাহলে উৎপাদন ১৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ কিংবা ২৫ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। আর একটি সম্ভাবনার ক্ষেত্রে অষ্টগ্রামের হাওর। এখানে বিভিন্ন প্রকার মাছ পাওয়া যায়। এ মাছের চাহিদা বিশাল চাহিদা সম্পন্ন করে অষ্টগ্রামে হাওর। পোশাকশিল্প যদি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুর্দা অর্জন করা যায় তাহলে কেন আমরা মাছ চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো না। জেলেদের সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে মাছ রপ্তানি করে বিদেশে বাংলাদেশকে পরিচিত করে তুলব। আমাদেরকে বিষয়টিকে এভাবে চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মাছের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা বলেছেন দেশের বাইরে খালেদা জিয়ার কোন ঠিকানা নেই, তার সন্তান হিসেবে আমিও বলতে চাই বাংলাদেশের বাইরে আমার কোন ঠিকানা নেই, বাংলাদেশই আমার ঠিকানা। বাংলাদেশই আমার প্রথম ঠিকানা, বাংলাদেশই আমার শেষ ঠিকানা। এদেশ ও মানুষের জন্য আমার সকল প্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে আমরা চিরদিন স্মরণ রাখবো এবং পাশে থাকব। এক ঐতিহাসিক ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকার পালিয়ে গেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৫-১৬ বছর ধরে গুম-খুন, হামলা, নির্যাতন উপেক্ষা করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় এসেছে জুলাই-আগস্ট এর আন্দোলনে মধ্য দিয়ে। এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে রাজনৈতিক দলের। শতাধিক নেতাকর্মী গুম করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬০ লক্ষ মামলা দিয়ে নির্যাতিত করা হয়েছে। এত দুর্নীতি, এত অপরাধ, গুম-খুন করার পর ৫ই আগস্ট এই স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে নেতাকর্মীরা শান্ত রয়েছে।
গণসমাবেশে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি ও ময়মনসিংহ বিভাগ সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেজ আলী মামুন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি রেজাউল করিম টিপু প্রমুখ।