জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ‘আইনি দিক থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা না থাকলেও ফ্যাসিবাদী, গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধকারী আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রেলিভ্যান্ট’ এবং নির্বাচনে আসতে দেওয়া হবে না। এ জন্য যদি আমাদের আবারও রক্ত দিতে হয়, আমরা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। তারপরও আওয়ামী লীগকে আর পুনর্বাসিত হতে দেওয়া হবে না।
রোববার দুপুরে জুলাই বিপ্লবে রংপুরের কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার আট শহিদের কবর জিয়ারত ও তাদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় রংপুরের সংগঠক আলমগীর হোসেন নয়ন, আরিফুল ইসলামসহ জেলা মহানগর ও বিভাগীয় নেতারা এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের মুখপাত্র শামীম হোসেন, আরিফুল ইসলাম, শিপুন আহম্মেদ হিমু, শরিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ওপরে গণহত্যা চালিয়ে যে ভয়ঙ্কর পাপ আওয়ামী লীগ করেছে, সে পাপ থেকে মুক্তির উপায় এখন পর্যন্ত তারা অবলম্বন করেনি। আওয়ামী লীগের বিচার এখন পর্যন্ত হয়নি, যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখন পর্যন্ত আমাদের সহযোদ্ধাদের খুনের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় খুনের ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। তাদের কোনোভাবেই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।
নতুন রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আখতার হোসেন বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর লুটেরা এবং বুর্জোয়া হওয়ার যে মানসিকতা সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জাতীয় স্বার্থে জাতীয় বুর্জোয়া হতে হবে। দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে, কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের সুবিধাগুলো দেখতে হবে এবং একইসঙ্গে যে অর্থ পাচার হয়, সে কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু এখনো অনেক ফ্যাসিবাদী নীতি, অনেক পুরনো নীতি, কানুন, ব্যবস্থা রয়ে গেছে। আমরা চাইব, আমাদের যে সংগ্রাম ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত; তার জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটির যে সংগ্রাম চলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে সংগ্রাম চলছে, সারাদেশের মানুষের যে সংগ্রাম চলছে এই সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ তার প্রান্তে পৌঁছাতে পারবে।
আখতার বলেন, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টে যখন অভ্যুত্থান হয় তখন ছাত্র-তরুণরা বাংলাদেশের রাজপথ দখলে নেয়। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তির জন্য তারা তাদের জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের সময়কালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ আমরা দেখেছি। আমরা সেখানে নতুন এক রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক শক্তির উল্লম্ফন হবে। সেটাই আমরা সেদিন দেখেছি। এই দীর্ঘ তিন-চার মাসের পথপরিক্রমায় বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনতার সাথে আমাদের যে যোগাযোগ হয়েছে এবং যে জরিপগুলো আছে তাতে এটা অত্যন্ত সুন্দরভাবে দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষ নতুন এক রাজনৈতিক শক্তি প্রত্যাশা করে। যে শক্তির নেতৃত্বে থাকবে তরুণরা। আমরা ছাত্র-তরুণরা মিলে যে রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করার কথা বলছি, এই রাজনৈতিক দল আমরা মনে করি নাগরিক কমিটি যে ভাষার উৎপাদন করেছে সেই ভাষায় এই দলটি গঠিত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিবাদমান যত পক্ষ আছে, আদর্শিক পক্ষগুলো আছে, সেই আদর্শিক পক্ষগুলোর সাথে দলাদলিতে আমরা লিপ্ত হতে চাই না। বাংলাদেশের জন্য সার্বিকভাবে আমরা একটি মধ্যমপন্থি রাজনৈতিক চর্চা করতে চাই। যে রাজনীতির ভিত্তি হবে বাংলাদেশের স্বার্থ। এই স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়ার কেউ চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলাই হবে আমাদের কর্তব্য। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করাই হবে আমাদের জীবনের শপথ।
নাম চূড়ান্ত হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে আক্তার হোসেন বলেন, এরই মধ্যে আমরা অনেকগুলো নাম পেয়েছি। সেখান থেকে ছাত্র-জনতা এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটা নাম আমরা সিলেক্ট করব।
দেশের আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো উন্নয়ন হয়নি। এখনো পুলিশ কাজ করছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব জায়গায় এখন আওয়ামী দোসর। অনেক জায়গায় মামলার ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এবং সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। মামলা বাণিজ্য হচ্ছে। সরকার এসব ঠেকাতে ব্যর্থ। আমাদের দাবি, বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি মাঠে কাজ না করতে চায় তাহলে তাদেরকে সরিয়ে জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনকারী তরুণদের নিয়োগ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে হবে।
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে আখতার বলেন, দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আমরা আশা করব, সরকার সিন্ডিকেটগুলোর বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেবে। পরে তিনি শহিদ পরিবারগুলোর বাড়িতে যান, সেখানে শহিদদের কবর জিয়ারত করেন এবং পরিবারের লোকজনের খোজখবর নেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের সবস্তরের মানুষ চান, নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তির আবির্ভাব ঘটাতে। আমরা বিশ্বাস করি, সামনের দিনে যারা বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে- তারা মানুষের দিশারী হয়ে থাকবে।