শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনামঃ
হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম কোন সংশ্লিষ্টতা নেই – ধর্ম উপদেষ্টা জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক ❝বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতীক❞ জনগণকে করের ওপর কর চাপিয়ে জনসমর্থন হারাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার : রিজভী নির্বাচিত সংসদ ও সরকার ছাড়া সংস্কারের বৈধ্যতা দেবে না বিএনপি ১২ দলীয় জোটের সমাবেশে বক্তারা: নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করবেন না ৩৪৪ সাবেক সংসদ সদস্যকে আসামি করে মামলার আবেদন লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হলেন খালেদা জিয়া হাসিনার ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি জনগণ ভালোভাবে নেয়নি: রিজভী সংসদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে : ড. ইউনূস

❝বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতীক❞

রিপোটার:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৬ Time View

❝বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতীক❞

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. একেএম শামছুল ইসলাম, পিএসসি, জি (অবঃ)

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়াপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডন যাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর রাস্তায় যে যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। অনেকেই এর দায় বিএনপি’র ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে একটু গভীরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই সমালোচনা কতটা যৌক্তিক বা অন্যায্য তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
এই যাত্রা কেন্দ্রিক সমালোচনায় সবচাইতে বেশী সরব আওয়ামী সুশীলরা। ইতিপূর্বে মাসের পর মাস রাজধানীর শাহবাগ দখল করে তিনটি হাসপাতাল জিম্মি করে যে যাত্রাপালার অবতারণা করা হয়েছিল, তখন তাদের চেতনা জাগ্রত ছিল দিবারাত্রী।

বিএনপি বর্তমানে সরকারে নেই। রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা জনদুর্ভোগ এড়াতে তাদের সাধ্যমতো সব ধরনের পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কাতার সরকার প্রেরিত বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে লন্ডন যাবার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলে বিএনপি দলীয়ভাবে কর্মী-সমর্থকদের প্রতি সুশৃঙ্খল আচরণ বজায় রাখতে এবং নেত্রীর যাত্রাপথে জনসাধারণের কোনো ধরণের বাধা বা অসুবিধা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করে। সে মোতাবেক সকল স্থরের নেতা-কর্মীদের অবস্থানের স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এই নির্দেশনা সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছিল।

এছাড়াও বিএনপি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়; যেনো দেশনেত্রীর যাত্রাপথে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো যানজট পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
এ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে একাধিক সমন্বয় মিটিং করে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করা হয়।

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বেগম খালেদা জিয়া তো নিছক একটি দলের নেত্রী নন। তিনি তো বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের হৃদয়ের নেত্রী। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়, কিন্তু মানুষের হৃদয়ের আসন থেকে তো সরানো যায় না। ফলশ্রুতিতে চিকিৎসা উপলক্ষ্যে তার বিমানবন্দরে যাত্রা পথে মানুষের যে বিপুল জনসমাগম এটি দেশনেত্রীর প্রতি দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের অসীম ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে বাঁধ ভাঙা জনস্রোতের স্বৈরাচার বিরোধী ঘৃণা যেমন ঠেকিয়ে রাখা যায়নি; তেমনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি মানুষের ভালোবাসাও ঠেকিয়ে রাখা যায় না।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে যে জনজোয়ার রাজধানী ঘিরে তৈরী হয়েছিল, তখনই আপামর জনতা দেশনেত্রীকে একনজর দেখবার জন্য উদগ্রীব হয়েছিল, কিন্তু নেত্রীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সেই আবেগ নিবারণ করা হয়েছিল। বস্তুত দেশনেত্রীর জেলযাত্রার পর হতে তাঁকে জনসম্মুখে আর তেমনভাবে দেখা যায়নি। তাই সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ধুমায়িত আবেগ ছিল পুঞ্জীভূত। আপোষহীন এই নেত্রীকে এক নজর দেখবার জন্য মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আকাঙ্খা প্রকৃত অর্থেই নিবারণ যোগ্য ছিলো না। কেনোনা তারা মুক্ত বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি বাংলাদেশকে দেখতে এসেছিল।

একটি বিষয় অনস্বীকার্য আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ যথেষ্ট তৎপরতা না হলে বিমানবন্দরে যাত্রা আরো প্রকট হতে পারতো। সর্বোপরি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর নিয়মতান্ত্রিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি যথেষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষ যখন বিদেশ যায়, তখন তাকে মাইক্রো ভর্তি করে আত্মীয়-স্বজন বিদায় দিতে আসে, এটাই বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসা ও সম্মান প্রকাশের চিরচারিত সামাজিক রীতি। বেগম খালেদা জিয়া তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আপষহীন গণতন্ত্রের প্রতীক, তাঁর সাথে জড়িয়ে আছে সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের আবেগ। বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা কেন্দ্রিক সমালোচনাও সেই সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশিত আবেগের উপর আঘাত।

যাত্রাপথে রাস্তায় উদ্ভুত জনসমাগম এড়াবার বিকল্প উপায় হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হেলিকপ্টারে করে বিমানবন্দরে নেয়া যেতো, কিন্তু সেটিতে লাখো লাখো মানুষকে তাদের নেত্রীকে একনজর দেখবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতো এবং তাদের মনোকষ্টের কারণ হতে পারতো! যা জনভিত্তিমূলক একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীকে জনসাধারণ হতে বিচ্ছিন্ন করার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হত।

এই জনসমাগমে শুধু বিএনপি কর্মী-সমর্থকরাই ছিলেন না, বরং দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষও তাকে বিদায় জানাতে ছুঁটে আসেন। তাদের কাছে তিনি একজন আপোষহীন দেশনেত্রী, একজন দেশপ্রেমিক এবং গণতন্ত্রের প্রতীক। তাই এই বিশাল জনস্রোত কোনো পরিকল্পিত সমাবেশ ছিল না; এটি ছিল একটি আবেগঘন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

যানজট, বিলম্ব এবং ভালোবাসার জট
মানুষের ভালোবাসার স্রোত এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করে যেখানে যানজট এড়ানো একরকম অসম্ভব হয়ে পড়ে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বিমানবন্দরে পৌঁছাতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। তবে এই বিলম্ব তার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, দোয়া এবং সম্মানের এক অনন্য উদাহরণ, যা কর্মফলের আল্লাহর এক অন্যন্য দৃষ্টান্তও বটে।

এর আগে যখন তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, তখনও রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লাখো মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করেছিল। বন্দুকের নলের সামনে তারা তাঁর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে না পারলেও তাদের চোখের জল তার প্রতি গভীর ভালোবাসারই প্রমাণ।

বিএনপি’র জন্য এটি একটি কঠিন সিদ্বান্ত ছিল— সাধারণ মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার জায়গাটার সম্মান অন্যদিকে সংরক্ষিতপথে নেতাকর্মী ও জনসাধারণের অলক্ষ্যে বিমানবন্দরে পৌঁছানো।

আমার মনে হয়— বিএনপি ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি। জনমানুষের প্রানের নেত্রী তাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবে, এটাই স্বাভাবিক।

তবে ভবিষ্যতে বিএনপি’র দলীয় নীতিমালায় একটি সুস্পষ্ট বার্তা রাখা যেতে পারে, যেমন: ‘জনগণের বিরক্তির কারণ না হওয়াই হবে দলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের সর্বোত্তম উপায়। জনসাধারণের অসুবিধা সৃষ্টি করে নেতাকে খুশি করার কোনো চেষ্টা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে।’

উন্নত চিকিৎসা জন্য দেশনেত্রীকে বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজনিয়তার কথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বারবার উচ্চারণ করলেও ফ্যাসিস্ট হাসিনা তা বরাবরই উপেক্ষা করেছিল।
এতে করে বেগম খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা দিনকে-দিন জটিল থেকে জটিরতর হয়েছে। আর তাই বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার্থে লন্ডন যাত্রার ঘটনাটি ছিল সাধারণ মানুষের একটি হৃদয়স্পর্শী অধ্যায় । এটি প্রমাণ করে যে, তিনি দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের আপামর মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক। যানজটকে শুধুমাত্র একটি অব্যবস্থাপনা বা দুর্ভোগ হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। এটি ছিল ভালোবাসার জট— একটি আবেগঘন মুহূর্ত, যা ইতিহাসে এক উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে থাকবে।

ভালোবাসার এই জট, যেখানে মানুষ পথ আগলে দাঁড়ায় দেশনেত্রীকে বিদায় জানাতে, সেটিই প্রকৃত গণমানুষের প্রতি একজন নেত্রীর ভালোবাসার প্রতিদান। এমন জট এড়িয়ে যাওয়ার মতো সাহস কেউ নেই, কারণ এই জট হলো মানুষের হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা আবেগের বাঁধন।▫

▪ লেখক : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. একেএম শামসুল ইসলাম, পিএসসি, জি (অবঃ), সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

Please Share This Post in Your Social Media

এই জাতীয় আরো খবর

খুলনায় জমি বিক্রি হবে

খুলনা-যশোর বিশ্বরোডে মোস্তফার মোড়ের নিকটে টুটুল নগর আবাসিক এলাকায় এখনই বাড়ি করার উপযোগী ১০ শতক জমি বিক্রি হবে। ডিজিটাল খাজনা খারিজ করা। সম্পূর্ণ নিষ্কন্টক। বিশ্ব রোড থেকে ২০ ফিট রাস্তা, ভেতরে ১৫ ফিট রাস্তা। উচু জমি।

যোগাযোগ: মো. মহসিন হোসেন-০১৭১১৭৮৩৮৬৮

 

© All rights reserved © 2022 deshnews24.com
Theme Customized By Max Speed Ltd.