বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা গ্রাস করেছিল সবকিছুতেই। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি প্লট থাকার কারণে রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি জনবহুল এলাকার রাস্তা তৈরি করেননি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত একমাত্র প্লট রয়েছে দক্ষিণখান চালাবন আর্মি সোসাইটিতে। শুধু এ কারণেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলের ১৬ বছর আর্মি সোসাইটির সব উন্নয়ন পরিকল্পনা বাতিল করে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরখান, দক্ষিণখানসহ নতুন ১৮টি ইউনিয়ন উত্তর সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এরপর থেকে এসব এলাকায় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। তাতে বিভিন্ন অলিগলির ড্রেনেজ ও রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজ পুরোদমে শুরু হলেও জিয়াউর রহমানের প্লট থাকা আর্মি সোসাইটির ভিতরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার লোকজন বহু দেনদরবার করে আর্মি সোসাইটির ভিতরের ড্রেনেজ ও রাস্তার কাজ উন্নয়ন তালিকাভুক্ত করে। কিন্তু উত্তরখান ও দক্ষিণখানের অন্যান্য কাজ প্ল্যান অনুসারে চললেও আর্মি সোসাইটির উন্নয়ন পরিকল্পনা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ মুহূর্তে হঠাৎ করে বাতিল করে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ওই প্লট থাকার কারণেই সিটি করপোরেশন ড্রেনেজ ও রাস্তার কাজের প্ল্যান বাতিল করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের পতনের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম অপসারিত ও গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার হন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দক্ষিণখানের মতো অনুন্নত এক এলাকায় অবস্থিত জিয়াউর রহমানের এক টুকরো জমি নর্দমায় পরিণত করে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেন আওয়ামী লীগ সরকার ও উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম। আর্মি সোসাইটিতে বহুবার ঘুরে গেছেন তৎকালীন মেয়র আতিক ও সাবেক এমপি হাবিব হাসান। প্রতিহিংসার কারণে জিয়াউর রহমনের প্লট থাকা এলাকায় বসানো হয় দুটি অননুমোদিত ওয়াশিং প্ল্যান্ট। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত পানি ওই প্ল্যান্ট থেকে বের হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। যা দিয়ে ভেসে যাচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট। এ ব্যাপারে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘নর্দমার পানিতে ডুবছে চালাবন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
উল্লেখ্য, জিয়াউর রহমানের চাকরিজীবনে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জেনারেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহসহ সমসাময়িক আর্মি অফিসাররা মিলে জায়গা কিনে প্লট ভাগ করে নিয়েছিলেন, তা চালাবন আর্মির টেক বা আর্মি সোসাইটি নামে পরিচিত। অন্য সেনা কর্মকর্তারা তাঁদের প্লট বিক্রি করে দিলেও খালেদা জিয়া মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত প্লট আর বেহাত করেননি। এলাকাটির উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে চলা প্রশাসনও এখন উদাসীন বলে জানান এলাকাবাসী। সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন