নিজস্ব প্রতিবেদক
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর বলেছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিনত করার ষড়যন্ত্র করেছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের অর্থনীতির বড় বড় উৎসগুলো বিদেশী শক্তির কাছে দিয়ে দিয়েছে। দেশের সম্পদ দেশের মানুষ পরিচালনা করলে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং দেশের অর্থ দেশে থাকবে। কিছু অসাধু আমলা নিজেদের আখের গোছাতে দেশের ক্ষতি করছে।
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেশ বাঁচাও, বন্দর বাঁচাও আন্দোলন-এর উদ্যাগ্যে “চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশীদের হাতে তুলে দেবার ষড়যন্ত্রের” প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএলডিপির মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, জমিয়ত ইসলামের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকবাল, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।
নূর বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাতে চল্লিশজন বঙ্গভবনে ঢুকার চেষ্টা করলো। পুলিশ কি করলো? কেনো তাদের প্রতিহত করা হলো না? একটি দূর্ঘটনা ঘটে গেলে এর দায়িত্ব কে নিতো? সেখানে গণ অধিকার পরিষদের একটি ব্যানারে বিক্ষোভ করা হয়। তারা গণ অধিকার পরিষদের কেউ নয়। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব স্পষ্ট বলেছেন, এটি একটি মীমাসিংত বিষয়। এটিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে রাষ্ট্রপতি থাকবে আর যদি না চায় তাহলে থাকবে না। অতি উৎসাহী হয়ে কেউ দেশকে অস্থির করবেন না। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। তবে, সরকার যদি জনগণের স্বার্থে কাজ না করে তাহলে রাজপথেই তার প্রতিবাদ করা হবে।
সাইফুল হক বলেন, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমরা আমাদের সম্পদ পরিচালনা করবো। কোনো ঘাটতি থাকলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তা পূরণ করবো। আওয়ামী লীগ সরকার বিদেশীদের কাছে মোটা অর্থের বিনিময়ে দেশীয় সম্পদ, প্রতিষ্ঠান বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশীদের দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছিলো। চট্টগ্রাম বঙ্গবন্ধু ট্যানেল তৈরী করা হয়েছে। তার মেইনটেইন খরচও ওঠে না। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করে সুন্দরবনকে হুকমির মুখে ফেলেছে। মেঘা প্রজেক্টের নামে মেঘা দূর্নীতি করেছে।
বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের রক্তের বিনিময়ে এসেছে। কোনো বিদেশি সংস্থার কাছে মাথা নত করবেন না। দেশের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব দেশের। আগের সরকার জাতীয় মর্যাদা ভূলন্ঠিত করে ভারতকে প্রাধান্য দিতো। এধরণের অনৈতিক কাজকে স্থগিত করতে হবে। দেশের বিষয়ে বিদেশীদের তৎপরতা রূখে দিতে হবে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নিজের ঘরে অভাব থাকলেও নিজ সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিতে পারি না। রাষ্ট্রের কাছে বন্দর, বিমানবন্দর, সীমান্ত হচ্ছে পরিবারের অংশ। নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল জাতীয় সম্পদ এবং আয়ের উৎস। আমরা বিদেশীদের পরামর্শ নিতে পারি। আমার দেশের কোম্পানিতে আমাদের শ্রমিকরা কাজ করবে। দেশের অর্থ বিদেশে যাবে না। অদক্ষতার অজুহাতে আমরা যদি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশীদের হাতে তুলে দেই তাহলে দেশ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের নাম ব্যবহার করে গলাবাজি করেছেন তারা ভারতে পালিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারকে ভারতকে প্রভু মনে করতো। তারা দেশের বন্দরগুলো বিদেশী রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার অপচেষ্টা করেছে। আমরা বর্তমান সরকারকে বিপ্লবী সরকার মনে করি। তারা নিশ্চয়ই দেশ বিরোধী কোনো ফাঁদে পা দিবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র সকলকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশের নৌ-বন্দর কোনো বিদেশিদের হাতে দেওয়া যাবে না বলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলো। এই রায়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার আপীল করলে আপীল বিভাগও একই রায় বহাল রাখে। তারপরও কোর্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শুধুমাত্র দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করতেই সরকার বিদেশীদের হাতে অনেক কিছু তুলে দিয়েছে।