মনিরুল ইসলাম ঃ ওয়াশিংটনভিত্তিক অধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক বিশিষ্ট সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারি বলেছেন,বিপ্লব ব্যর্থ করতে নানামূখী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে।
তিনি বলেছেন, জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের পর নানা ঘটনা ঘটছে। এতে স্পষ্ট পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। যড়যন্ত্র মোকাবেলায় সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রোববার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনে সাংবাদিক সমাজের ভূমিকা ও বর্তমানে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাভ শেয়ার বিডি-ইউএস’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণঅভ্যুত্থানের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদী, তাহির জামান প্রিয় ও মো. শাকিল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের হাতে অনুদানের নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়। এরআগে সিলেটে আবু তাহের মোহাম্মদ তুরারের পরিবার ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৫জন আহত সাংবাদিকের অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিহত সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিকের পরিবারের কাছে অনুদানের অর্থ পৌছে দেওয়া হবে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, আমরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের কাছে গিয়েছি। তারা হাত, পাত, চোখ হারিয়েছে, তারপরও আমাদেরকে দেখে বিজয়ের হাসি হেসেছে। অথচ তাদের সারাজীবন এই আন্দোলনের ক্ষত বয়ে বেড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একবার ভাবুন যে সাংবাদিক মারা গেছে, তার পরিবারটির কথা। যে বা যার গেছে সে জানে; কী হারিয়েছে। এখনো নিহতের মা অপেক্ষা করছে, এই বুঝি তার ছেলে ফিরবে, স্ত্রী হয়ত অপেক্ষা করছে তার স্বামীকে ফিরে পাবেন, তার অবুঝ সন্তানটি সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে- মিথ্যে শান্তনা, মিথ্যে আশ্বাস।
মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো একজন নোবেল বিজয়ী অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন, এটা জানিয়ে বিশ্বে আমরা আলোকিত হই। তার সরকারকে কোন ভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এই সরকারের কাছে জনগণের চাওয়া পাহাড়সম। সেটা পুরণ করা সম্ভব না। তবে সরকারকে নূন্যতম আকাঙ্খাপুরণে সচেষ্ট হতে হবে।
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কবি হাসান হাফিজ বলেন, নিহতদের সঙ্গে বেঈমানি করলে বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবে। ফ্যাসিস্টের সঙ্গে, স্বৈরাচারের সঙ্গে আপোষ করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। প্রতিবিপ্লব ঘটনানোর জন্য স্বৈরাচারের প্রেতাত্বারা, ফ্যাসিস্টের দোসরা নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভোটাধিকার নিশ্চিত করে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে আগুন জ্বলানো হচ্ছে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ঘটছে। ভারত আমাদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু সেজন্য তাদের প্রভুত্ব মেনে নিতে পারি না। প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হবে সমতার ভিত্তিতে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসও সে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। সরকারকে সহযোগিতায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্রদের পাহারা দিতে হবে।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মহাপরিচালক এম আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্র – জনতার অভ্যুত্থানে ৫জন সাংবাদিক নিহত এবং ২২৬ জন সাংবাদিক আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৩৫জন গুলিবিদ্ধ। আর গত সাড়ে ১৫ বছরে আরো ৫৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। প্রতিদিনই গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন। তথ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সরকার তাদের জন্য কাজ করছে।
সিনিয়র সাংবাদিক জাহেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, লাভ শেয়ার বিডি-ইউএস’র পরিচালক ফজলে রাহী নওশাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজ)’র সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাছির জামাল, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী এবং নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদীর পিতা মো. মোশাররফ হোসেন, মো. শাকিল হোসেনের পিতা মো. বেলায়েত হোসেন ও তাহির জামান প্রিয়’র নানা মো. শফিউল আলম।
প্রিয়’র নানা মো. শফিউল আলম প্রিয়’র নামে এলিফ্যান্ট রোডের নামকরণের দাবি জানান।