সেন্সরের গ্যাড়াকলে নয়, চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন-২০২৩ বাস্তবায়নের দাবি
মনিরুল ইসলাম ঃ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন-২০২৩ বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা।চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের নিয়ম বাতিল করে সার্টিফিকেশন বোর্ডে রূপান্তরের কথা দীর্ঘদিন ধরেই বলছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন করে সেন্সর-প্রথা বাতিলে সরব হয়েছেন চিত্রকর্মীরা। তারা ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন-২০২৩’ আলোকে নতুন বোর্ড চান।
সেন্সর-প্রথা বাতিল চেয়ে আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিএফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে চলচ্চিত্রকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, চলচ্চিত্র প্রযোজক- পরিবেশক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ফিল্ম ক্লাবের সভাপতি শামসুল আলম, নায়ক- অভিনেতা ওমর সানী, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন, পরিচালক এ জে রানা, সায়মন তারিক,
পরিচালক-প্রযোজক শিমুল প্রমুখ । এছাড়া উপস্থিত ছিলেন অনেকে।
তারা বলেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে চলচ্চিত্রে সেন্সর-প্রথা নেই; সার্টিফিকেশন বোর্ড রয়েছে। তবে এখনো ঢাকার সিনেমায় সেন্সর-প্রথা রয়ে গেছে। চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের নিয়ম বাতিল করে সার্টিফিকেশন বোর্ডে রূপান্তরের কথা দীর্ঘদিন ধরেই বলছি আমরা৷ শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন করে সেন্সর-প্রথা রেখেই সেন্সর বোর্ড পূর্ণগঠন করা হয়েছে। আমরা এর বাতিল চাই।
তারা বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই বিদ্যমান আইনকে পাশ কাটিয়ে নতুন সেন্সর বোর্ড গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যা নিয়ে শিল্পী, কলা-কুশলী, নির্মাতাসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা সমালোচনার ঝড় বইছে।
চলচ্চিত্রের স্বাধীনতা চান চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ তারিখে সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, আমরা সেন্সর বোর্ড চাই না আমরা সেন্সর সার্টিফিকেশন চাই। আমাদের গ্রেডেশন করে দেয়া হোক। আমার জানা মতে, ২০২৩ সালে এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আমরা চাই, একজন নির্মাতা তার মেধা দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করবে। আমরা চাই, রাষ্ট্রদ্রোহ কোনো বক্তব্য ছাড়া ও শালীনতার মধ্য থেকে বাস্তব চিত্র চলচ্চিত্রের পর্দায় তুলে ধরতে। আমরা চলচ্চিত্রের স্বাধীনতা চাচ্ছি।
নবগঠিত সেন্সর বোর্ডের কমিটি দেখে হতাশ প্রযোজক সামসুল আলম। তার ভাষায়, ‘সেন্সর বোর্ড দেখে আমি হতাশ। দুই-চারজন ছাড়া যাদের নাম দেখলাম, তাদের একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক। আমি উনাকে চিনি না। একজন মালেক আফসারির সিনেমা, একজন কাজী হায়াতের সিনেমা চলবে কি চলবে না এটা কে সিদ্ধান্ত দিবে এটা ভেবে দেখতে হবে। মাননীয় তথ্য উপদেষ্টার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি সেন্সর বোর্ড আমরা চাই না, সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ড করা হোক। গ্রেটেশন করে দিন আমাদের চলচ্চিত্রকে। আর ওই গ্রেডেশন বোর্ডেও যারা থাকবেন তারা যেন চলচ্চিত্রের মানুষদের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হয়। তাদের নিয়ে যেন কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। উনি কি সিনেমা বানিয়েছেন চলচ্চিত্রে উনার অবদান কি?
পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন বলেন, চলচ্চিত্রের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি সেন্সর বোর্ড বাতিল করে সেন্সর সার্টিফিকেশন করার। আমরা সেন্সরের গ্যাড়াকলে থাকতে চাই না। মুক্ত স্বাধীন চলচ্চিত্র চাই। নতুন সূর্যের আলোকে প্রত্যাশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার আলোকিত সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন করবে। তবে অতীতের মতোই সেন্সর বোর্ডের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে এই প্রজ্ঞাপনে চলচ্চিত্রের গুণীজনদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের গুণী ও অভিজ্ঞদের সম্পর্কিত করলে আরও বেশি সুন্দর হতো। সামনে সার্টিফিকেশন বোর্ডে গুণীদের মূল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস করছি। যদি সেন্সর বোর্ডই রাখা হয় সেক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের গুণীজনদের সম্পর্কিত করে পুনর্গঠন করলে আরও ভালো হবে।
চিত্রনায়ক ওমর সানী বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে সেন্সর বোর্ড গঠন হয়ে আসছে। আমার প্রাণের দাবি-বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে অনৈতিক কিছু হোক সেটা আমরা কেউ চাই না। যে চলচ্চিত্রগুলো দেশের জন্য ক্ষতিকর, মানুষের জন্য ক্ষতিকর, সেটা আমরা চাইব না। আমাদের চলচ্চিত্র একই জায়গায় বন্দি হয়ে আছে। পাঁচটা ফাইট, পাঁচটা ড্যান্স একই ধারায় আছে। বিগতদিনে এটার পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছি। এটা দেখানো যাবে না, ওটা দেখানো যাবে না। একই জিনিস দর্শক আর কত দেখবে? ভালোকে ভালো আর মন্দকে মন্দ যদি দেখাতে না পারি, তা হলে দর্শক কেন দেখবেন?’ আমি চাই সেন্সরের জাতাকলে পড়ে আমারা যেনো হারিয়ে না যাই।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। যেখানে নিপুণ ও নওশাবার সঙ্গে সদস্য হিসেবে রাখা হয় নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু, খিজির হায়াত খান, তাসমিয়া আফরিন মৌ, লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক রফিকুল আনোয়ার রাসেলকে। পুনর্গঠিত সেন্সর বোর্ডে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চেয়ারম্যান এবং সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানকে সদস্য সচিব করা হয়।