ঢাকা: প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন, নাকি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই দুই বিপরীতমুখী অবস্থান ঘিরে নেতাদের মুখে গর্জনে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজপথ।
দুই দলই একই দিন প্রায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে সমাবেশ করবে। সরকার বিরোধী আরও কয়েকটি দল ঢাকায় সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
সরকারবিরোধী এবং সরকারি দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে তাই তৈরি হয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে কী হবে শুক্রবার?
সপ্তাহখানিক আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে ঢাকায় ২৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি।
আওয়ামী লীগও মাঠ দখলে রাখতে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কেউ যাতে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্যই মূলত তাদের কর্মসূচি।
বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন- যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। আর বিএনপি নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চায় মহাসমাবেশ করতে।
বিএনপিকে মতিঝিলের অদূরে গোলাপবাগ মাঠে এবং আওয়ামী লীগকে আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে সমাবেশের জন্য বলা হয়। ওয়ার্কিং ডে-তে নয়াপল্টনে না দিয়ে এরপর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করতে না চাওয়া বিএনপি তাদের সমাবেশ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার নেয়।
অন্যদিকে বাণিজ্য মেলার মাঠটি ব্যবহারে অনুপযোগী হওয়ায় তারাও একদিন পিছিয়ে নেয়। দুই দিন নানা নাটকীয়তা শেষে অবশেষে ২৩ শর্ত সাপেক্ষে বিএনপিকে নয়াপল্টনে এবং আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের পাশে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে অনুমতি দেয় পুলিশ।
দুই মেরুর প্রধান দুই দলের পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আওয়ামী ও বিএনপিকে একই শর্ত মেনে চলতে হবে। জনদুর্ভোগ করা যাবে না। যদি তারা আইন মেনে সমাবেশ না করেন, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।
আগামীকাল বড় দুইটি রাজনৈতিক দলের জনসভা, সেখানে আইন শৃঙ্খলার কোন অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা যেন নিয়মশৃঙ্খলা, আইন মেনে চলবেন, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করেন সেজন্য আহ্বান রাখব, তারা কোনো ধ্বংসাত্মক কাজে যেন লিপ্ত না হন, জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি না করেন। সেজন্যই আমি বলেছি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মসূচি পালন করবেন এখানে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তারা যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন কিংবা যানমালের ক্ষতি, ভাঙচুর করেন, জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ায়, শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করেন তখন আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তার যে কাজ বা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সেটা তারা পালন করবেন।
তবে গত দুই দিনে রাজনীতির মাঠে যে তেজ ছিল তা কিছুটা হলেও অনুমতির পর প্রশমিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশি প্রতিনিধিরা দেশে থাকায় নৈরাজ্যের খুব একটা আশঙ্কা নেই।
এদিকে, বিকেলে দলের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কথা বলেছেন নেতৃবৃন্দ।
বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রলীগের যৌথ শান্তি সমাবেশ বিএনপির দেখাদেখি নয় উল্লেখ করে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বিএনপির অন্যায়- অত্যাচার-জুলুম থেকে রক্ষার জন্য এ সমাবেশ। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নিখিল বলেন, এ সমাবেশে সারা দেশ থেকে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নয়, সাধারণ জনগণও উপস্থিত হবেন। আগামীকাল কত লোক হবে তার হিসাব মিলাতে পারবেন না, লোকে লোকারণ্য হবে। জনতার ঢল নামবে ঢাকাতে।
নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা মহাসমাবেশকে সাফল্যমণ্ডিত করতে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। দলের নেতাকর্মীরা অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনা সহকারে শান্তিপূর্ণ এই মহাসমাবেশে দলে দলে যোগ দেবেন। বিলম্বে হলেও আগামীকাল মহাসমাবেশে পুলিশ কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সুত্র: বাংলানিউজ২৪