রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনামঃ
দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনতে হবে: মুহাম্মদ শাহজাহান পতিত” আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসন রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে : আমিনুল হক আগামী বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্য আমরা এমন সমাজ চাই যেখানে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না: মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন মতিঝিল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী আগামী ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি গাড়িচাপায় বুয়েটশিক্ষার্থীর মৃত্যুঃ গাড়িচালকসহ দুজনের শরীরে মিলেছে অ্যালকোহল হাসান আরিফের মরদেহ দেখতে হাসপাতালে ড. ইউনূস বাণিজ্য ঘাটতি মেটাও, নইলে শুল্ক বসবে : হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের হাসান আরিফের মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি : রাষ্ট্রপতি হাসান আরিফের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক

শুরু হয়েছে ‘প্রকৃতি ও জীবন মিউজিক ক্লাব’, যেখানে থাকবে মুক্তিযুদ্ধ ও প্রকৃতিসহ সব ধরনের গান: মুকিত মজুমদার বাবু

রিপোটার:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৯১ Time View

মনিরুল ইসলাম ঃ চ্যানেল আইতে প্রচারি হয় প্রকৃতি ও জীবন’ অনুষ্ঠান। জীববৈচিত্র্য নিয়ে এই অনুষ্ঠান। প্রকৃতির সব কিছুই তোলা ধরার চেষ্টা থাকে এই অনুষ্ঠানে। এই অনুষ্ঠানটির কারিগর চ্যানেল আই এর অন্যতম এক পরিচালক মুকিত মজুমদার বাবু। ১৯৭১ সালে ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। একজন প্রকৃতিপ্রেমী। প্রকৃতিবন্ধু। বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসীর স্বামী। অনুষ্ঠানটি পরিবেশবাদীদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। তিনি প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের এর চেয়ারম্যান। তার সাথে কথা হয়। এসব কথাই তুলে ধরা হলো হুবহু।

প্রশ্ন: এক বছরে প্রকৃতি ও জীবনের সাফল্য কতটুকু?

মুকিত মজুমদার বাবু: প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন মাত্র এক বছরের সাফল্যের গল্প নয়, বরং ১৫ বছরের
পথচলার ফলাফল। তাই এক বছরের না বলে আমাকে পুরোটাই বলতে হবে। প্রথম থেকেই আমরা বিভিন্ন
পরিবেশ রক্ষা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ শুরু করি। ২০০৮ সালে প্রথম ‘প্রকৃতি ও জীবন’ অনুষ্ঠান
নির্মাণের পরিকল্পনা মাথায় আসে। সে সময় সংযুক্ত আরব-আমিরাতে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘লাক্স-চ্যানেল আই
পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড’ -এর দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। অনুষ্ঠানটির আগে আরব-আমিরাতের নানা বিষয় টেলিভিশনে তুলে ধরার জন্য ‘রোড টু শারজা’ নামক একটি প্রামাণ্যচিত্র ধারণ করা হতো। তারই
ধারাবাহিকতায় আরব-আমিরাতের জীববৈচিত্র্য তুলে ধরা হয় ২০০৮ সালে। কাজটা করতে গিয়ে হোঁচট খাই।
তারা মরুভূমির দেশটাকে সবুজ করার জন্য কী প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে! শত শত কোটি ডলার খরচ করে মরুভূমির বুকে জলাশয় তৈরি করছে, জীববৈচিত্র্য বাড়াতে অন্যদেশ থেকে পশুপাখি আনছে, বৃক্ষরোপণ করছে, ঘাস লাগাচ্ছে। বিপরীতে আমরা কি করছি! আমরা জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে নানাভাবে
ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। অপরিকল্পিত কর্মকাÐের মাধ্যমে প্রকৃতিকে হুমকির সম্মুখীন করছি। গাছ কাটছি,
জলাশয় ভরাট করছি, নদী দূষণ ও দখল করছি, নানাভাবে পরিবেশ দূষিত করছি। গর্ব করার মতো এ দেশের
পরিবেশ ও প্রতিবেশকে বিপন্ন করে তুলছি। যে দেশে কিছুই নাই সেখানে তারা এরকম প্রানান্তকর চেষ্টা করছে।
পয়সাও খরচ করছে। সেখানে আমরা কি করছি। এটা আমাকে একটা নাড়া দিলো। সেই থেকে ভাবলাম
কিভাবে কী করা যায়। তারপর প্রকৃতি ও জীবন অনুষ্ঠান নিয়ে চিন্তা শুরু করলাম।

প্রশ্ন: প্রকৃতি ও জীবন অনুষ্ঠানের শুরুর প্রস্তুতি কেমন ছিল?

মুকিত মজুমদার বাবু: বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত না থাকায় আমরা ছয় মাস একটানা
বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলের চিত্র ধারণ করি আমাদের দেশে কী ধরনের জীববৈচিত্র্য আছে সেটা বোঝার জন্য।
১৫৩টি ক্যাসেট রেকর্ড হয়। ফুটেজ নিয়ে দেখিÑ অনুষ্ঠান করার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত হাতে এসেছে। পর্ব
দাঁড় করানোর জন্য সম্পাদনার কাজ শুরু করা হয়। এরই ভেতর ইনডোরের কাজ শেষ করা হয়। সঙ্গে যুক্ত হয়
অন্যান্য সেগমেন্ট। সহজ-সরল করে পাÐুলিপি দাঁড় করানো হয়।
আমি অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট লেখকদের জন্যও কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আমি বললাম, ভাষাটা সহজ হতে হবে,
কারণ আমাদের মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো। অনুষ্ঠান ইন্টারেস্টিং করতে অনেকগুলো
সেগমেন্টে ভাগ করা হলো-যেমন আউটডোর ফুটেজ, ইনডোরের ইন্ট্রডাকশন এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি।
আমার পরিকল্পনা ছিল যে স্টুডিওটি যেন প্রকৃতির মতো দেখায়, যেন মনে হয় আমি কোনো বন বা গার্ডেনে
বসে কথা বলছি। আমি সেট ডিজাইনারকে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলাম, এবং সে অনুযায়ী সেট তৈরি হলো।
আমার চিন্তা অনুযায়ী সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং ফলস্বরূপ, একটি চমৎকার সেট গড়ে উঠেছে। তারপর
২০১০ সালের ১ আগস্ট ভোঁদড় নিয়ে প্রচারিত হয় প্রকৃতি ও জীবনের প্রথম পর্ব। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটির ৩৭০
পর্ব প্রচারিত হয়েছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।
‘প্রকৃতি ও জীবন’ প্রামাণ্য অনুষ্ঠানের চিত্রধারণ খুবই চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় তথ্য-
উপাত্তের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। কখনো খাবার সংকট, কখনো পানি থাকে না, কখনো বা থাকার
জায়গা মেলে না, কখনো বা যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকে একেবারেই অপ্রতুল। গরমের সময় কাজ করতে প্রাণ
ওষ্ঠাগত হয়। আবার শীতের দিনে হাড় কাঁপানো শীত শরীরে দাঁত বসিয়ে দেয়। এরপর আছে এক হাঁটু কাদাপানি মাড়িয়ে ছবি তোলা। কখনো কখনো হিংস্র জীবজন্তু ভয়, কীটপতঙ্গ, জোঁক, পোকা-মাকড়ের কামড়ও খেতে হয়। তবু থেমে থাকেনি অনুষ্ঠান নির্মাণের কাজ। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য,
জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরে পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা
গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: ফাউন্ডেশন গঠনের চিন্তা কখন মাথায় এল?
মুকিত মজুমদার বাবু: প্রকৃতি ও জীবন অনুষ্ঠান শুরু করার আগে, ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর আমি প্রকৃতি ও
জীবন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করি। আমি বিশ্বাস করি, যদি প্রতিষ্ঠান না থাকে, তাহলে কার্যক্রম এক সময় থেমে
যাবে। আমার উদ্দেশ্য শুধু নিজের মুখ দেখানো নয়, বরং কাজগুলো অব্যাহত রাখা। তাই ফাউন্ডেশনের
ব্যানারে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। আমি চেয়েছিলাম যে শুধুমাত্র টেলিভিশন অনুষ্ঠান নয়, বরং ফিল্ড ওয়ার্ক, রিসার্চ,
পাবলিকেশন্স এবং প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য কার্যক্রমও করতে। একারণেই ফাউন্ডেশন গঠন করা, যাতে
কাজগুলো অব্যাহত থাকে এবং আমাদের পরিবেশের জন্য কিছু করা যায়।

প্রশ্ন: প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে কিছু বলুন।

মুকিত মজুমদার বাবু: গবেষণা কার্যক্রম, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, গাছ লাগানো, বন সংরক্ষণ,
জীববৈচিত্র্য রক্ষা, দূষণ রোধসহ ফাউন্ডেশন প্রকৃতি সংরক্ষণ, পরিবেশ রক্ষা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি নিয়ে
নানান ধরনের কাজ করে। ফাউন্ডেশনের ব্যানারে ‘প্রকৃতি মেলা’ ও ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক’ প্রদান করা হয়,
যেখানে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখা ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে এই
পদক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

প্রশ্ন: সব কাজতো নিজস্ব অর্থায়নেই করছেন? এভাবে ফাউন্ডেশন আর কী কী ধরনের কাজ করছে?

মুকিত মজুমদার বাবু: হ্যাঁ। নিজের ফাইন্যান্সেই করতে হচ্ছে।
প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন কেবল টেলিভিশন অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয়। আমরা ফিল্ডওয়ার্ক, রিসার্চ এবং
পরিবেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মকাÐের সঙ্গে জড়িত আছি। বন্যপ্রাণী, পরিবেশ ও জলবায়ুসহ বিভিন্ন বিষয়ের
ওপর প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন নিয়মিত বই প্রকাশ করছে। গুরুত্বপূর্ণ এই বইগুলো দেশের বিভিন্ন
স্কুলÑকলেজে বিতরণ করা হচ্ছে, যাতে আগামী প্রজন্ম সচেতন হয়ে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণে ভ‚মিকা
রাখতে পারে।
আরেকটা কাজ আমরা করি, সেটা হলো দুস্থ মানবতার সেবায় ২০১২ সালের ২১ জুন প্রতিষ্ঠা করি স্বাস্থ্যসেবা
কেন্দ্র। যার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলাতে ক্যাম্প করে
দরিদ্র মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। স্কুলের শিশুদের নিয়মিত দেয়া হচ্ছে খাদ্য ও
শিক্ষাসামগ্রী। শীত, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষদের দেয়া হয় শীতবস্ত্র ও ত্রাণ। যেখানে
আমরা একদম গরিব মানুষকে ট্রিটমেন্ট দেই। যারা রিকশা চালায়, ভ্যান চালায়, খোয়া ভাঙ্গে, গৃহকর্মী,
গার্মেন্টস ওয়ার্কার, এরকম যারা নিজেদের মেডিকেল সাপোর্ট দিতে পারে না। এর পাশাপাশি এখন সারা
বাংলাদেশ ব্যাপি ৬৪টি জেলাতে প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব হয়েছে। এটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের
শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিবেশ সচেতনতামূলক কমর্সূচি পরিচালনা করছে। ‘সবুজে সাজাই বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে
গত বছর প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব সারাদেশে ১০ লক্ষাধিক গাছের চারা রোপণ ও বিতরণ করেছে। চলতি বছরও
এই কমর্সূচি চলমান রয়েছে।

প্রশ্ন: প্রতিটি জেলায় ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে প্রোগ্রাম কিভাবে হয়?

মুকিত মজুমদার বাবু: প্রতিটি জেলায় আমাদের ক্লাবের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যখন গাছরোপণ করা
হয়, তখন স্থানীয় প্রশাসন এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে নিয়ে আমরা পরিবেশ সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করি, কারণ তারাই জাতির ভবিষ্যৎ। সুতরাং স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায়
ক্লাবের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আরেকটা জিনিস এবার শুরু করলাম, এই বছর শুরু
হলো যেটা। এখনো ওইভাবে লাইমলাইটে আসে নাই। প্রকৃতি ও জীবন মিউজিক ক্লাব।

প্রশ্ন: প্রকৃতি ও জীবন মিউজিক ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য কী?

মুকিত মজুমদার বাবু: প্রকৃতি ও জীবন মিউজিক ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য হলো হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী গানগুলো
ফিরিয়ে আনা এবং সংরক্ষণ করা। এটি এখনো শুরু করার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম
শুরু হবে। মিউজিক ক্লাবে মুক্তিযুদ্ধের গান, পল্লীগীতি, ভাটিয়ালি, ফোক গান ও অন্যান্য দেশীয় গান অন্তর্ভুক্ত
থাকবে। আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী এসব গান আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম এই
গানগুলোর সঙ্গে পরিচিত হোক এবং প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্ক বুঝতে পারুক। মিউজিক ক্লাবের
মাধ্যমে আমরা এসব গানের সংরক্ষণ ও প্রচারে কাজ করে যাব।

প্রশ্ন: আপনি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা আপনাকে কিভাবে অনুপ্রাণিত করেছে?

মুকিত মজুমদার বাবু: ১৯৭১ সালে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। আমি জানতাম না বেঁচে
ফিরতে পারব কিনা, কিংবা আমাদের দেশ স্বাধীন হবে কিনা। কিন্তু আমরা যুদ্ধ করেছি দেশের জন্য এবং আজ
আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গানগুলো আমার কাছে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। স্বাধীন বাংলা
বেতার কেন্দ্রের গানগুলো এখনো আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’এ গানটি আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এই দেশ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, আমাদেরই দায়িত্ব এটাকে ভালো
রাখা। স্বাধীনতা অর্জন ও বর্তমান অবস্থায় এসে আমি সবসময় অনুভব করি যে, এই দেশের প্রতি আমার অনেক
ঋণ আছে।

প্রশ্ন: এ নিয়ে আপনার একটি বইও আছে।
মুকিত মুজমুদার বাবু: হ্যা। বইয়ের নাম হলো ‘আমার অনেক ঋণ আছে’। সবুজের ওপরে এবং প্রকৃতির নানা
বিষয় নিয়ে আরো বই আছে। আমার কাছে মনে হয় এই যে এই দেশটা আমি বলব প্রত্যেকের জীবনের কিছুনা
কিছু তো দিয়েছে এই দেশটা। এই দেশটা যদি না হতো বাংলাদেশ যদি জন্ম না হতো আমরা তো পাকিস্তানের
অধীনেই থাকতাম। আমরা কী আজকে এই জায়গায় আসতে পারতাম? কখনই পারতাম না কিন্তু। যে যেখানেই
আছে কেউ কিন্তু তার মূল জায়গায় পৌঁছাতে পারত না। যদি পাকিস্তান থাকত। কারণ তখন তো পাকিস্তানিরাই
রুল করতো। এবং তারাই কিন্তু সব জায়গায় বসে থাকতো। আমরা কিন্তু আমাদের দেশের প্রতি যে ভালোবাসা,
কর্তব্য, মায়া সেটাও পালন করতে পারতাম না। আমাদের হয়তো কেরানি হিসাবেই বাঁচতে হতো। এই
দেশটাকে ভালো রাখার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের সবার। ওই জায়গা থেকেই আমার মনে হয়েছে আমি যেটুকু
পারি আমার করা উচিত। সেটুকুই চেষ্টা করছি। সেটাই চলছে। আমি সব সময় ভাবি, আর কি কি করা যায়।
এটা সবসময় মাথায় থাকে। যার কারণে একটা একটা করে সব সময় উইং বাড়ছে। এখন দেখেন প্রকৃতি ও
জীবন অনুষ্ঠান। তার আগে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন। তারপর প্রকৃতি ও জীবন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, প্রকৃতি ও
জীবন ক্লাব, প্রকৃতি ও জীবন মিউজিক ক্লাব। সুতরাং একটা একটা করে উইং কিন্তু বাড়ছে।

প্রশ্ন: বইয়ের পাশাপাশি আর কি ধরনের প্রকাশনা আছে?

মুকিত মুজমুদার বাবু: আরেকটা জিনিস আমি বলতে ভুলে গেছি সেটা হলো আমরা একটা পত্রিকা বের করি,
প্রকৃতিবার্তা। এটার অনলাইন ভার্সন আছে। অনলাইন ভার্সন প্রতিদিন আপডেট হচ্ছে। আর ছাপা ম্যাগাজিন
বের করি তিন মাস পর পর। আর প্রতি বছর একুশে বইমেলাতে একটা বই বের হয়। বইমেলাতে স্টল থাকে
আমাদের।

প্রশ্ন: তৃণমূল পর্যায়ে প্রকৃতিবিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে কিভাবে কাজ করছেন?

মুকিত মজুমদার বাবু: আমি যেটা করি মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গায় যাই। যে স্কুলগুলোতে ইলেক্ট্রিসিটি নাই।
যেখানে প্রোপার স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাই, এইসব জায়গায় গিয়ে ওদেরকে প্রাকৃতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রজেক্টরে
দেখাই। ওরা অবাক হয়ে দেখে। আমাদের নানা প্রাণি, গাছপালা এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলি। চিপসের
প্যাকেট যেখানে সেখানে না ফেলতে বলি। তারপর এই যে প্লাস্টিকের বোতলের কি ক্ষতি, চিপসের প্যাকেটের
কি ক্ষতি, এই যে হেলথ হেজার্ডএবং এটা যে মাটিতে মেশেনা, এসব নানা বিষয় তুলে ধরি। আর ওদের বলি
প্রাণিগুলো কেন রক্ষা করতে হবে। প্রাণি হারিয়ে গেলে কি ক্ষতি হবে। ন্যাচারে এই প্রাণিগুলোর কন্ট্রিবিউশন
কি। আসলে আমরা কতটুকু জানি এইসব সম্পর্কে। উদাহরণস্বরূপ, পাখির কথা বলি। আমরা পাখির সৌন্দর্য
এবং গান উপভোগ করি, কিন্তু তাদের প্রকৃত ভূমিকা অনেক গভীর। পাখিরা যে বিজের বিস্তার ঘটায় এবং তার
মল দিয়ে সার তৈরি হয়, তা আমাদের জীবন ও পরিবেশের জন্য অপরিহার্য। প্রাণির অবদান ও তাদের ভূমিকা
নিয়ে আমাদের সচেতনতা বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাখি যেমন পানির উপর মল ত্যাগ করে, তা মাছেদের
জন্য খাদ্য হয়ে ওঠে। একইসঙ্গে, সেই মল জলজ উদ্ভিদগুলোর জন্য সার হিসেবে কাজ করে। প্রতিটি প্রাণিরই
এই পৃথিবীতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। গাছপালা, প্রাণি ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে প্রকৃতি
সঠিকভাবে কাজ করে। এজন্য, আমাদের উচিত সকল প্রাণির গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং তাদের রক্ষা করার
চেষ্টা করা, কারণ এই সবই আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। প্রকৃতির প্রতিটি সৃষ্টি, ছোট
বা বড়, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং আমাদের উচিত সেগুলোকে বোঝা ও রক্ষা করা।

প্রশ্ন: ভবিষ্যত প্রজন্মকে কিভাবে সচেতন করা যায়?

মুকিত মজুমদার বাবু: প্রকৃতি, পরিবেশ এবং বায়োডাইভারসিটি প্রতিটি জীবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। তবে, আমাদের ছোটবেলা থেকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ,
আমরা কখনও জানতে পারি না কেন গাছের ডাল ভাঙা উচিত নয়, কেন পাখির ডিম নষ্ট করা যাবে না বা
ব্যাঙকে ঢিল মারা উচিত নয়। আমরা জানি না যে গাছ না থাকলে অক্সিজেন পাবো না এবং কার্বন ডাই
অক্সাইড শুষে নেবে না। পাখির অবদানও অপরিসীম-পাখিরা সার এবং বিজের বিস্তারে সাহায্য করে, পাশাপাশি
ক্ষতিকর পোকামাকরও নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যাঙও মশা ও বিষাক্ত পোকামাকরের ডিম খেয়ে তাদের সংখ্যা কমাতে
সাহায্য করে। যখন আমরা ধর্মীয় শিক্ষার কথা বলি, তখন আমরা নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে শিখাই। কিন্তু
প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে খুব কম কথা বলা হয়। বাবা-মা এবং গুরুজনদের দায়িত্ব হল এই
বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। এজন্য আমি মনে করি, প্রকৃতির শিক্ষা আমাদের বাসা থেকে শুরু হওয়া উচিত।
বাড়িতে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করে, পরবর্তীতে স্কুল ও কলেজে পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে তা আরও
বিস্তৃত করা যেতে পারে। এইভাবে, আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে
তুলতে পারব।

প্রশ্ন: সুন্দর প্রকৃতিতে সুস্থ্য জীবন গড়তে আমাদের করণীয় কী?

মুকিত মজমুদার বাবু: আমাদের সমাজে একটি বড় সমস্যা হলো যে, আমরা পরিবেশকে নিজেদের না ভাবার
মানসিকতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমরা প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি রাস্তায় ফেলে দেই,
মনে করে যেন এই স্থান আমাদের নয়। এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। যে জায়গায় আমরা যাই, যে
রাস্তায় চলাফেরা করি, সেগুলোও আমাদেরই। আমাদের উচিত পরিবেশকে ভালোবাসা এবং যতœ নেওয়া। যদি
আমরা এই জায়গাগুলো পরিচ্ছন্ন রাখি, তবে আমরা নিজে ভালো থাকবো এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি
সুস্থ পরিবেশ তৈরি করতে পারবো। এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং শিক্ষা, যাতে আমরা বুঝতে পারি যে,
আমাদের ছোট ছোট কার্যকলাপ পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে। যদি সবাই নিজেদের পরিবেশকে নিজেদের
অংশ মনে করে, তাহলে আমরা একসঙ্গে একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন এবং সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারব।

Please Share This Post in Your Social Media

এই জাতীয় আরো খবর

খুলনায় জমি বিক্রি হবে

খুলনা-যশোর বিশ্বরোডে মোস্তফার মোড়ের নিকটে টুটুল নগর আবাসিক এলাকায় এখনই বাড়ি করার উপযোগী ১০ শতক জমি বিক্রি হবে। ডিজিটাল খাজনা খারিজ করা। সম্পূর্ণ নিষ্কন্টক। বিশ্ব রোড থেকে ২০ ফিট রাস্তা, ভেতরে ১৫ ফিট রাস্তা। উচু জমি।

যোগাযোগ: মো. মহসিন হোসেন-০১৭১১৭৮৩৮৬৮

 

© All rights reserved © 2022 deshnews24.com
Theme Customized By Max Speed Ltd.