নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল( বিএনপির) সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পাট মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ,স,ম হান্নান শাহর ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আগামীকাল ২৭ সেপ্টেম্বর । হান্নান শাহ্ ছিলেন কাপাসিয়া তথা দেশের বিএনপির নেতা-কর্মীদের দুর্দিনের অন্যতম কান্ডারী ।
২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হান্নান শাহ্ নিজ বাসায় অসুস্থ্য হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ এ) ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ১১ সেপ্টেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরের র্যাফেলস হার্ট সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তার হৃদযন্ত্রের অস্ত্রপাচার করা হয়।
র্দীঘ ২১ দিন জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে তিনি ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। এ উপলক্ষে শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থাকার কথা রয়েছে বলে হান্নান শাহ্ ছোট ছেলে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ্ রিয়াজুল হান্নান (রিয়াজ) জানিয়েছেন এবং তার পিতার আত্বার মাগফিরাত কামনায় তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
হান্নান শাহ্ ১৯৪২ সালে কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামে সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা ফকির আব্দুল মান্নান ছিলেন পাকিস্তান আমলের মন্ত্রী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। ১৯৫৬ সালে ঢাকার সেন্টগ্রেগরি স্কুল থেকে মেট্রোকোলেশন পাস এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
১৯৬০ সালে বিএসসি অধ্যয়ণকালে পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে সামরিক একাডেমি কাকুল থেকে কমিশন প্রাপ্ত হন। ১৯৮৩ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে থাকাকালীন সময়ে এরশাদ সরকার বাধ্যতামূলক তাকে অবসর প্রদান করেন।
হান্নান শাহ্ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭৯ সনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর বিএনপির ক্রান্তি কালে তাঁর নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানের লাশ উদ্বার করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এনেছিলেন ।
তিনি ১৯৮৪ সালে বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন। পরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মনোনীত হন। ১৯৯১ সালে গাজীপুর- ৪, কাপাসিয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পাট মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে তৎকালীন বহুল আলোচিত ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনের সেনা সমর্থীত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গণতন্ত্র বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম প্রতিবাদ করেন এবং জিয়া পরিবারের পক্ষে অবস্থান নেন। তখন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জোরপূর্বক বিদেশে পাঠানোর বিপক্ষে প্রতিবাদ করেন। গণমাধ্যমে তখন সরকারের সমালোচনার কারনে বার বার হান্নান শাহ’কে বার বার জেলে যেতে হয়েছে। দলের এ ক্রান্তিকালে সক্রিয় ভূমিকার কারনে তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়। হান্নান শাহ্ কৃতি ফুটবলার, হকি ও গল্ফ খেলোয়ার ছিলেন।
তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকার ওয়ান্ডার্স ক্লাবের গোল রক্ষক ছিলেন। তিনি বক্সিংয়ে সেনাবাহিনীতে রেকডও তৈরী করেছিলেন। বাংলাদেশ সুটিং ফেডারেশনের সভাপতিও ছিলেন। তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে পৃথিবীর ৫০ টির মত দেশ ভ্রমন করেছেন। হান্নান শাহ্ ছিলেন কাপাসিয়ার উন্নয়নের রূপকার। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এলাকার স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়নে তার বিশেষ ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে স্থানীয় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর তার নির্মিত ‘ফকির মজনু শাহ’ সেতু স্মরণীয় হয়ে থাকবে।