সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ অপরাহ্ন

দেশের সব নদ-নদী খাল পুনরুদ্ধার ও সীমানা নির্ধারণ করুন: আবদুল লতিফ জনি

রিপোটার:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৮৫ Time View

মো. মহসিন হোসেন, ঢাকা:  শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের যুগান্তকারী পদক্ষেপ খাল খনন প্রকল্প ও নদী খনন প্রকল্প অব্যাহত থাকলে আজ বাংলাদেশের নদীগুলো সচল থাকতো। তাহলে প্রতিবছর বন্যার তীব্রতা থেকে এ দেশের মানুষ রক্ষা পেতো। আবারও জিয়ার খাল খনন প্রকল্প ও নদী খনন প্রকল্প চালু করার দাবি জানিয়েছেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি। একই সাথে ৫০ বছর পূর্বের জাতীয় ভূমি নকশা অনুসারে বাংলাদেশের প্রতিটি নদ-নদী খাল পুনরুদ্ধার ও নদীর সীমানা নির্ধারণ করার দাবি জানান তিনি।

বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ দাবি জানান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবদুল লতিফ জনি বলেন, সম্প্রতি দেশের পূর্বাঞ্চলে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের বিশেষ নির্দেশনায় দলের প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন প্রতিটি জেলা থেকে পর্যাপ্ত ত্রান ও ঔষধ সামগ্রী নিয়ে বন্যায় সহায় সম্বলহীন মানুষের পাশে এসে দাড়িয়েছেন। জননেতা তারেক রহমানের এ নির্দেশনায় বানভাসী এলাকার দূর্দশাগ্রস্ত মানুষের যে উপকার হয়েছে তাহা ফেনী , নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরবাসী আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

তিনি বলেন, আমি ফেনী জেলার একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এবারের বন্যা নিজ চোখে দেখেছি- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার কারণে লাখ লাখ মানুষ নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরবাসী- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর এমন কর্মকাণ্ডকে কখনো ভুলতে পারবে না। বিশেষ করে ফেনীর ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজীর মানুষ আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। সেই এই আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার ও সাহায্য করার জন্য দেশের প্রতিটি জেলা থেকে অসংখ্য সামাজিক সংগঠন এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্ররা বন্যার্তদের পাশে দাড়িয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিকদল তাদের সাধ্যানুযায়ী ত্রান নিয়ে বন্যাদূর্গত মানুষের সীমাহীন কষ্টের পাশে থেকেছেন। তাদেরকেও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

আবদুল লতিফ জনি বলেন, সম্প্রতি দেশের পূর্বাঞ্চলে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। লাগাতার বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পানি নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কোনো পূর্ব সতর্কীকরণ ছাড়াই সব গেট আকস্মিকভাবে খুলে দেওয়ার কারণে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলায় নিয়ন্ত্রনহীন এ ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। শুরু হয় মানবিক বিপর্যয়। ফেনী জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া থানার পুরো এলাকা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। সোনাগাজী, দাগুনভূইয়া থানাও ৭ থেকে ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। গবাদি পশু (গরু-ছাগল-ভেড়া-মহিষ-হাঁস-মুরগি) পানির তীব্র স্রোতে ভেসে চলে যায়। শুরু হয় অমানবিক-অবর্ণনীয় বাসস্থান ও খাদ্যসংকট।

বন্যার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জনি বলেন, ঘুম থেকে উঠেই মানুষ দেখতে পায় অথৈ পানিতে তীব্র স্রোতে মানুষের জীবনের সমস্ত সহায়-সম্বল টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও-কোথাও বানভাসি মানুষ গাছে এবং আশে-পাশের উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, সেটাও দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এমনি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের বিশেষ নির্দেশনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বানভাসি মানুষকে উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় খাদ্য ,পানি সরবরাহ করতে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশের গর্ব, বাংলাদেশ সশস্র বাহিনীর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী তাদের হেলিকপ্টার, স্পিডবোট ও নৌযান নিয়ে। সেনাবাহিনী প্রধান নিজেও বন্যাকবলিত এলাকার দূর্দশাগ্রস্ত মানুষের উদ্ধারকাজ নিজ চোখে দেখার জন্য গিয়েছেন এবং মানুষকে সব রকম সহযোগীতার আস্বাস দিয়েছে। সেনা সদস্যরা মানুষকে উদ্ধার করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার দোতলা-তিনতলা ভবন যেগুলো উঁচু ছিলো সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে বানভাসিদের রাখা হয়। প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। পানির তীব্র স্রোতে অনেক সময় ইঞ্জিন চালিত নৌকাও সঠিক পথে চলতে ও উদ্ধার কার্যক্রম চালু রাখতে ভিষন কষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। নদী বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে চিন্তা করা যেমন অসম্ভব তেমনি বাংলাদেশের অনেক নদী অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে মাতৃতুল্য নদী আজ ইতিহাসের ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। মা যেমন সন্তানকে আগলে রাখে, তেমনি বাংলাদেশের নদীও হাজার হাজার বছর ধরে এ দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে একাকার হয়ে মিশে আছে। এই বিবেচনার গুরুত্বকে সামনে রেখে ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ঘোষক এবং রণাঙ্গনের ‘জেড’ ফোর্সের সর্বাধিনায়ক মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী বীর, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ফেনী নদীর মোহনায় মুহুরী প্রকল্প এবং ছোট ফেনী নদীর মোহনায় মুছাপুর ব্যারেজ প্রকল্প চালু করেন। এই প্রকল্পগুলো সমুদ্রের নোনা পানির জোয়ারের সময় ফসলের যাতে ক্ষতি না হয় এবং শুকনো মওসুমে মিঠা পানি জমিয়ে রেখে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। যার ফলে ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের অনেক অঞ্চলে ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয় এবং ধান উৎপাদনে এই অঞ্চল স্বনির্ভর হওয়ার সফলতা লাভ করে। জোয়ারের সময় নোনা পানির তীব্র আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ায় মানুষ ফসল উৎপাদনে সফলতার গৌরব অর্জন করে।
আবদুল লতিফ জনি বলেন, উল্লেখিত- ২ প্রকল্প বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন সেচ প্রকল্প হিসেবে তাদের দ্বারাই পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। সেচ প্রকল্পে কতটুকু পানি ধারন করতে পারবে এবং কতটুকু পানি জমে গেলে বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে যাবে, সে নির্দেশনাও কিন্তু, প্রতিটি বাঁধে দেওয়া আছে। অথচ , পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে বাঁধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও মুহুরী প্রজেক্টে মাত্র ৪টি গেট খোলা হয়। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ অনুরোধ ও প্রচেষ্টায় সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়। এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয় যে, মুহুরী প্রজেক্টের নিম্নাঞ্চল এবং সমুদ্রের মোহনায় চট্টগ্রাম জেলার মিরেরসরাই থানার সমুদ্রাঞ্চলে বিগত সরকারের আমলে বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল তৈরি করতে গিয়ে নদীর মোহনাকে বালু ভরাট করে সংকুচিত করে ফেলা হয়। এতে পানির স্বাভাবিক গতিপথ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই ইকোনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার পূর্বে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রকৃতির উপর কি প্রভাব পড়বে এ ব্যাপারে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে কি-না, তা জাতির সামনে এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। মুছাপুর ব্যারেজ প্রকল্পের গেটগুলো বন্ধ থাকার কারণে বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে বাঁধটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস কাছে আবেদন জানিয়ে জনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তা-ঘাট মেরামত ও মানুষের বাড়িঘর পুর্নবাসনের পাশাপাশি মুহুরী ও মুছাপুর প্রকল্পের গেটগুলো কেন সময়মতো খোলা হয়নি তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

তিনি বলেন, বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী ভরাট করে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান, বিলাসী প্রমোদ বাংলোবাড়ী , বিনোদন কেন্দ্র, ক্লাব তৈরী করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ করে নদীগুলো নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নদীমাতৃক বাংলাদেশ আজ ইতিহাসের পাতায় স্থান পাচ্ছে। বাস্তবে নেই।এর কারণ হচ্ছে…. বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ এর দখল । ১) বসুন্ধরা নগরায়ন প্রকল্প। ২) মেঘনা নদীর তীর ঘেষে বসুন্ধরা ও মেঘনা গ্রুপের শিল্পাঞ্চল এবং মেঘনার শাখা নদীগুলো ভরাট করে তাদের শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার কারণে নদীগুলো বিলীন হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে।৩) বুড়িগঙ্গা ,বালু ও তুরাগসহ প্রতিটি নদী আজ বিলীন হওয়ার পথে। ৪) বসুন্ধরা এবং ইউনাইটেড গ্রুপ বালু নদীর শাখা নদীগুলো সম্পূর্ণ ভরাট ও ধ্বংস করে তাদের নিজস্ব নগরায়ন ও প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে নিজেদের হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এভাবে যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাংলাদেশের নদী দখল অব্যাহত থাকে, তাহলে সেদিন আর বেশি দূরে নয়; যেদিন এই অঞ্চল সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যা কবলিত হয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে।

আবদুল লতিফ জনি বলেন, স্রোতস্বিনী নদীগুলো ভরাট করে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এর কারণে জাতি কতটুকু উপকৃত হয়েছে? কিভাবে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি হয়েছে? তা তদন্ত করা হোক। নদী হত্যাকারী পাহাড় ধ্বংসকারী, বনাঞ্চল দখলকারী ও ইটভাটা করে পরিবেশ নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক। শুধু তদন্ত নয়, উপদেষ্টামন্ডলীর কাছে আকুল আবেদন, ঐ সমস্ত দখলকারী ও তাদের দোষরদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একই সাথে গত ৫০ বছর পূর্বের জাতীয় ভূমি নকশা অনুসারে বাংলাদেশের প্রতিটি নদ-নদী খাল পুনরুদ্ধার ও নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হোক

Please Share This Post in Your Social Media

এই জাতীয় আরো খবর

খুলনায় জমি বিক্রি হবে

খুলনা-যশোর বিশ্বরোডে মোস্তফার মোড়ের নিকটে টুটুল নগর আবাসিক এলাকায় এখনই বাড়ি করার উপযোগী ১০ শতক জমি বিক্রি হবে। ডিজিটাল খাজনা খারিজ করা। সম্পূর্ণ নিষ্কন্টক। বিশ্ব রোড থেকে ২০ ফিট রাস্তা, ভেতরে ১৫ ফিট রাস্তা। উচু জমি।

যোগাযোগ: মো. মহসিন হোসেন-০১৭১১৭৮৩৮৬৮

 

© All rights reserved © 2022 deshnews24.com
Theme Customized By Max Speed Ltd.