গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে কেন্দ্রীয় বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের গাড়ি বহরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা ও ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছা সেবক দলের ক্রিড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার (৪০) নিহত ও আহত হয়েছে ৩৫ জনের অধিক।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতীর একটি জনসভায় যোগ দিতে যাবার পথে সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে এ হমলার ঘটনা ঘটে।
সভাপতি এস এম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রওশন আরা রত্না ও তাদের কলেজ পড়ুয়া ছেলে রাফনান আদিত রায়ানসহ (১৭) বিএনপির কমপক্ষে ৩৫ জন নেতাকর্মীকে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়াও সময় টিভির ক্যামেরা পার্সন এইচ এম মানিক কে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
জেলা এনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিক উজ্জামান জানান, ‘ঢাকা থেকে রওনা হয়ে বিকেল ৩টায় গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রামে পথসভা শেষে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের গাড়িবহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। গাড়িবহরটি ঘোনাপাড়া এলাকায় পৌছালে পূর্বে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগি সংগঠনের একদল সশস্ত্র লোক গাড়ির গতিরোধ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় এস, এম জিলানীর গাড়িসহ অন্তত ৮-১০টি গাড়িতে ভাচুর চালায় হামলাকারীরা। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়কের পাশে থাকা গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে পিছু হটে যায় তারা। কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের কর্মীসমর্থকেরা মাইকিং করে সংঘটিত হয়ে আবারো হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে এস এম জিলানী, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদারসহ (৩৫) অন্তত ৩৫ জনকে রক্তাক্ত জখম করে।
পরে দিদারের মৃত্যু হলে দিদারের লাশ অজ্ঞাত স্থানে রাখে এবং পরে রাত ৭টার দিকে ঢাকা খুলনা মহাসড়কের চরপাথালিয়া নামক স্থানে ফেলে রেখে যায়। আহতদের মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি নাসির আহমেদ মোল্লা (৫৫), স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মাহমুদ খান মুরাদ (৪৬), জেলা যুবদলের সাবেক দফতর সম্পাদক রাজু বিশ্বাস (৩৯), ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির লিল্টু মুন্সি (৪৫), ঢাকার মতিঝিলের স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা বাদশা মিয়া (৩৫) ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিশানসহ (৩১) ১০ জনকে তাৎক্ষণিক গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সন্ধ্যায় গুরুতর আহত অবস্থায় এস এম জিলানী, জেলা যুবদলের সদস্য এস এম শরিফুল ইসলাম সবুজকে উন্নত চিকিৎসার ঢাকায় পাঠানো হয়।
নিহত দিদারের বাড়ি ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ীতে। তিনি একজন ক্রিকেটের আম্পায়ার ছিলেন। ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ দেখা না গেলেও ঘটনাস্থল থেকে বেশ খানিক দূরে পুলিশের অবস্থান দেখা যায়।
বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই সড়কে চলাচলকারীরা।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, হামলা কে বা কারা করেছে তা তিনি বলতে পারেননি। তবে তিনি বলেন একবার শুনেছি বিএনপি করেছে আর একবার শুনেছি আওয়ামী লীগ করেছে। ঘটনার সময় আমরা ছিলাম না তাই ঘটনার বিষয় তেমন জানা নেই। ওই সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে সন্ধ্যার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এলাকা এখন শান্ত রয়েছে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের গাড়িবহরে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শওকত আলী দিদারকে হত্যা এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীসহ দলীয় নেতাকর্মীদের আহত করার ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।