বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনামঃ
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদের প্রতিবাদ হাসনাত আব্দুল্লাহর শতভাগ দলীয়করণে ক্রীড়াঙ্গন আজ তলানিতে : আমিনুল হক জলবায়ু প্রশমনে নতুন এনডিসিতে ভূমি, বন এবং জলাভূমিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বর্তমান সময়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা শুভ বড়দিন উপলক্ষে বিশ্বের সকল খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীকে তারেক রহমানের শুভেচ্ছা রিহ্যাব ফেয়ারের দ্বিতীয় দিনেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় পিন্টুকে পেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হলাম: নজরুল ইসলাম খান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর বিবৃতি বড়দিন উপলক্ষ্যে খ্রিষ্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুদান শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে দখলদারিত্ব চাঁদাবাজি বন্ধ করতেই হবেঃ ডা. শফিকুর রহমান

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত: উপকূলে জলোচ্ছ্বাস, ভেঙেছে বাঁধ

রিপোটার:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪
  • ৬৭ Time View
ছবি: প্রথম আলো

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার ২৬ মে রাতে উপকূলে আঘাত হেনেছে। রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।

ঝড়ে প্রাথমিকভাবে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ঝড়ের প্রভাবে হওয়া অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বরগুনার আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক রাত ১২টার দিকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি এখনও উপকূল অতিক্রম করছে। অতিক্রমের এই সময়ে উপকূলজুড়ে ঝোড়ো হাওয়া ও অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তৃতির কারণে সোমবার উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোনো কোনো জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

এর আগে রাত সোয়া আটটার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তৃতি প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর অগ্রভাগ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে খুলনা উপকূলের কাছে সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করে। এর প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়।

ঘূর্ণিঝড়ের আগে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামের এক ব্যক্তি মারা যান। উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের প্রয়াত নরীম মোড়লের ছেলে।

অন্যদিকে রিমালের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে শরীফুল ইসলাম (২৪) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভেঙেেছে বাঁধ
বরগুনার প্রধান তিন নদীতে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড পশরবুনিয়া গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রায় ৬০০ মিটার ভেঙে পায়রা নদীতে বিলীন হয়েছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে পানির চাপে আমতলীর পরশুরবুনিয়া এলাকার বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতের কাজ শুরু করেছি। এ ছাড়া যেসব বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে। জেলার এক হাজার মিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।’

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামসংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর থেকে পানি গড়িয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে সেখানকার চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়াছটাসহ অন্তত ২১টি গ্রাম। এসব গ্রামের হাজারো মানুষকে গৃহপালিত প্রাণী, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, কাপড়চোপড় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে শহরের দিকে ছুটতে দেখা যায়। উপকূলের মানুষের আশ্রয়ের জন্য শহরের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক হল ও কিছু হোটেল খুলে দেওয়া হয়। কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেক উপকূলে শুঁটকি উৎপাদনের মহাল রয়েছে প্রায় ৭০০টি। জোয়ারের পানিতে ৩০০টির বেশি মহাল পানিতে ডুবে গেছে।

বরিশাল নগরের নিম্নাঞ্চলসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বরিশাল নগরের রূপতলীর জিয়ানগর, খ্রিষ্টানপাড়া, পলাশপুর, বেলতলা, মোহাম্মদপুর, রসুলপুর, দক্ষিণ রূপাতলী, ভাটিখানা, কাউনিয়া, প্যারারা রোড, সদর রোড, কেডিসি, ত্রিশ গোডাউন, দপদপিয়া ও কালিজিরা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় তারা ঘরবন্দী রয়েছে। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়ক চলে গেছে পানির নিচে।

বাগেরহাটে ঝোড়ো হাওয়ায় সঞ্চালন লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রোববার সন্ধ্যা থেকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।

নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেড়িবাঁধ না থাকায় নিঝুম দ্বীপের সব কটি গ্রাম সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নিঝুম দ্বীপের প্রধান সড়কের ওপরে ২ ফুট উচ্চতায় পানি প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অনেকের মাছের খামার ও পুকুরের মাছ। অনেক জায়গায় মানুষের বসবাস করা ঘরেও পানি ঢুকে গেছে।’

১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত
রোববার সকালেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়–বৃষ্টি শুরু হয়। সকালেই পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং এসব জেলার কাছের দ্বীপ ও চরগুলোও ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় ছিল।

এর পাশাপাশি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরের কাছের দ্বীপ ও চরগুলোও মহাবিপৎসংকেতের আওতায় ছিল।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

নৌ ও বিমান চলাচল বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ, ভোলার সব নদ-নদী এবং ঢাকার সদরঘাট ও দোহার উপজেলার মৈনটঘাট থেকে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

রোববার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এই রুটে চলাচলকারী দেশের এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে। বন্ধ রাখা হয় বঙ্গবন্ধু টানেলও। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, সোমবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত এই বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা বন্ধ করা হয়েছে।

তবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করায় ওই রুটে ফ্লাইট যাচ্ছে না।

ছুটি বাতিল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ সারা দেশের সব মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে এসব তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান। তিনি জানান, রিমাল আঘাত হানতে পারে, এমন এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি রাখা হয়েছে। তাই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে, তবে ক্লাস হবে না।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান রাত সোয়া নয়টায় প্রথম আলোকে বলেন, ৯ হাজার ২২২টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত আট লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আসছেন। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় উপকূলের কোথাও কোথাও প্রাথমিকভাবে ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে।

উপদ্রুত উপকূল
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে রোববার সকাল থেকেই ছিল মেঘলা আকাশ। এসব এলাকার সাগরও ছিল উত্তাল। পটুয়াখালীর নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ উপচে নিম্নাঞ্চল ও লোকালয় প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন স্থানীয় লোকজন।

পটুয়াখালীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জোয়ারের সময় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ১ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ কারণে অনেক এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

সুত্র: প্রথম আলো

Please Share This Post in Your Social Media

এই জাতীয় আরো খবর

খুলনায় জমি বিক্রি হবে

খুলনা-যশোর বিশ্বরোডে মোস্তফার মোড়ের নিকটে টুটুল নগর আবাসিক এলাকায় এখনই বাড়ি করার উপযোগী ১০ শতক জমি বিক্রি হবে। ডিজিটাল খাজনা খারিজ করা। সম্পূর্ণ নিষ্কন্টক। বিশ্ব রোড থেকে ২০ ফিট রাস্তা, ভেতরে ১৫ ফিট রাস্তা। উচু জমি।

যোগাযোগ: মো. মহসিন হোসেন-০১৭১১৭৮৩৮৬৮

 

© All rights reserved © 2022 deshnews24.com
Theme Customized By Max Speed Ltd.