কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানের পরিমাণ সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এবার সেখানে পাওয়া গেছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। এগুলো গুণতে টানা প্রায় ১৮ ঘণ্টা সময় লাগে। রাত পৌনে ২টার দিকে টাকা গণনা কার্যক্রম শেষ হয়।
এবারের মতো এত বিপুল পরিমাণ টাকা দানবাক্সে কখনো পাওয়া যায়নি।
সাধারণত তিন মাস পর পাগলা মসজিদের সিন্দুক খোলার রীতি রয়েছে। তবে এবার চার মাস ১০ দিন পর খোলা হয়েছে। এ কারণে টাকার পরিমাণ বেশি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল দানবাক্সগুলো। তখন পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা।
রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, শুধু দেশি টাকা নয়, সিন্দুকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রূপার অলঙ্কারও পাওয়া গেছে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৮টায় খোলা হয় মসজিদের ৯টি দানবাক্স বা সিন্দুক।
সেখানে পাওয়া টাকাগুলো ভরতে প্রয়োজন পড়ে ২৭টি বস্তার। পরে এগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে গণনা করা হয়। আড়াই শ লোকের টানা ১৮ ঘণ্টা সময় লাগে টাকাগুলো গুনতে।
জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপারের মোহাম্মদ রাসেল শেখের তত্ত্বাবধানে মসজিদের সিন্দুকগুলো খোলা হয়।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, এ মসজিদের দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় কোটি কোটি টাকা।
এ কারণে মসজিদের দানবাক্সে কী পরিমাণ টাকা পাওয়া গেল, তা নিয়ে লোকজনের কৌতুহল থাকে। তাই গণনা শেষে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রাপ্ত টাকার অঙ্ক।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদে দানের প্রবাহ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
কঠোর নিরাপত্তায় বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের নেতৃত্বে সিন্দুকের টাকা গণনার কাজ শুরু হয়। গণনাপর্ব শেষ হয় রাত প্রায় ২টার সময়।
স্থানীয়রা জানায়, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন লোকজন এ মসজিদে দান করে। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়- এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসে পাগলা মসজিদে। দান করে মোটা অঙ্কের টাকা। তাছাড়া প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গোবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে লোকজন।
আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় দানবাক্সে পাওয়া চিঠিপত্র। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনে পাওয়ার আনন্দ, না-পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে। এবারও এ ধরনের অনেক চিঠি ছিল দানবাক্সগুলোতে।
পাগলা মসজিদের টাকা জমা হয় রূপালী ব্যাংকে। এই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদের কর্মচারী ও কমিটির লোকজন, মাদরাসার ছাত্রসহ সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই শ লোক সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি টাকাগুলো গুণে শেষ করে।
মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র।
জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছে।
মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দানের টাকায় মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে আন্তর্জাতিকমানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে। এখন সবকিছু গুছিয়ে আনা হয়েছে। খুব শিগগিরই কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু হবে।