ঢাকা: আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ কোনোদিন পালায় না।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে কৃষক লীগ আয়োজিত ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের বিরোধী দল, যদিও পার্লামেন্টে নেই, বলে আমরা না কি পালানোর পথ পাব না। হুমকি দেয়।
তিনি বলেন, যিনি এ বক্তব্য দেন তাকে একটু স্মরণ করাতে চাই শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কোনোদিন পালায় না, পালায়নি।
১/১১ সরকারের সময় দেশে ফিরে আসার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে দেশ ত্যাগ করেছিল যে আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না, ওই খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া। আর সেই সময় আমি বিদেশে ছিলাম, আমাকে আসতে দেবে না। আমাকে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসতে দেবে না। সমস্ত আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সকে বলে দিয়েছে কেউ যেন আমাকে নিয়ে ঢাকায় ল্যান্ড না করে। ঢাকায় তাদের অবতরণ করতে দেবে না। এ ধরনের নির্দেশ দেওয়ার পরেও আমি এক রকম জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসি।
তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়েছিল যে কেউ যদি এয়ারপোর্টে যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা তো মানেনি। যেদিন আামি জোর করে নামলাম ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ সেদিন এয়ারপোর্টে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমি ফিরে এসেছি। আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছিল। যে মুহূর্তে নামবো সেই মুহূর্তে গুলি করে মারবে। আমি বলেছি খুব ভালো কথা দেশের মাটিতে তো মরলাম। বিদেশ বিভুঁইয়ে তো মরতে হলো। আমাকে বলেছে এমন জায়গায় নেওয়া হবে কেউ খোঁজ পাবে না। আমি বলেছি বাংলাদেশে এখনো সে রকম জায়গা সৃষ্টি হয়নি যে আমাকে নিয়ে গেলে বাংলাদেশের মানুষ খুঁজে বের করবে না। আমি তারপরও যাব। আমি তো জোর করে ফেরত এসেছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পালিয়ে গেছে যাদের নেতা। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি। গ্রেনেড হামলা করে আইভী রহমানসহ আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। আমাকে যারা হত্যা করার চেষ্টা করেছে। যারা মানিলন্ডারিং কেস, দুর্নীতি, সেই পাওয়ার প্ল্যান্টের দুর্নীতি, সড়কের দুর্নীতি, যার বিরুদ্ধে আমেরিকার এফবিআই এসে সাক্ষী দিয়ে গেছে। যে সাক্ষীতে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। আর তার ছেলে তারেক জিয়া খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি মামলার আসামি, যেখানে আমেরিকা পর্যন্ত যার ভিসা দেয়নি। ভিসা বাতিল করে দিয়েছে এবং যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে গেছে সেই আসামি যার দলের নেতা তাদের মুখে বড় বড় কথা- আমরা না কি পালানোর পথ পাব না। আরে তোরা পালায়ই আছিস। এক পলাতক আসামির তত্ত্বাবধানে এত লম্বা কথাটা আসে কোথা থেকে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা সহনশীলতা দেখাচ্ছি। কিন্তু আবার দেখলাম তাদের সেই অগ্নিসন্ত্রাস, সেই ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে তারা যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, ২০০১ এর নির্বাচনের পর যেভাবে আমাদের নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার করেছে আমরা যদি তার এক ভাগ প্রতিশোধ নিতাম তো তোদের হদিসই পাওয়া যেত না। কারো হদিসই পাওয়া যেত না।
তিনি বলেন, আমরা তো প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনি। ঠিক আছে যার যার পার্টি করো আমরা তো মানা করিনি। আমরা তো আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকতেই পারতাম না। পুলিশ দিয়ে বাধা দেওয়া হতো। একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমার ওপর, সেদিন কিন্তু পুলিশ ছিল না।
জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের (বিএনপি) প্রভু জিয়াউর রহমানও তো চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। পেরেছে? পারেনি। তারপর এরশাদ আর খালেদা জিয়া এরা তো রীতিমতো ৭১ এর হানাদার বাহিনীর মতো গণহত্যা চালিয়েছে। ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। চোখ তুলে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে, দখল করেছে, বসতবাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলা গাছের চারা পুঁতেছে।
বিএনপি মিটিং করার জন্য টাকা কোথায় পাচ্ছে- প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন কোথা থেকে এত টাকা পাচ্ছে। যত চুরি করা টাকা ছিল সেগুলো এখন বেরুচ্ছে না কি। একেক মিটিং করতে যে কতগুলো টাকা খরচ হচ্ছে টাকাগুলো কোথা থেকে আসছে।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে এ একটা প্রতিজ্ঞা নিয়েই এসেছি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি salgen.it ফুটিয়ে আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করবো। আমাদের প্রত্যেকটা সহযোগী সংগঠন, সেই সংগঠনগুলোকেও সেভাবেই কাজ করতে হবে। যেন বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে চক্রান্ত চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য বার বার বাধা এসেছে। তাদের প্রভুরা এখনো চক্রান্তে লিপ্ত।
কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।