ঢাকা : দেশীয় চলচ্চিত্রের মেগাষ্টার খ্যাত নায়ক, প্রযোজক ও পরিচালক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল। চলচ্চিত্রশিল্পের উন্নয়নে তাঁর নিরলস ভূমিকা অস্বীকার্য। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সমিতির নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত আছেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক।
আজ শনিবার দুপুরে আলাপচারিতা তিনি বলেন,
আমাদের চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট অনেক বড়। ১৯৫৬ সালে ‘মুখ ও মুখোশ’ সবাক ছবি দিয়ে এ দেশে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়। এরপর বিখ্যাত সব মেধাবী নির্মাতার হাত ধরে ধীরে ধীরে এ চলচ্চিত্র একসময় একটা সোনালি সময়ে আসীন হয়। তখন ছিল এনালগ যুগ। আর এখন ডিজিটাল যুগ।
তিনি বলেন, অথচ চলচ্চিত্র নির্মাণের সূতিকাগার হচ্ছে বিএফডিসি। বিএফডিসি এখনও ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তনে পুরোপুরি সক্ষম হয়নি। তাই এক্ষেত্রে আগে এর উন্নয়ন দরকার। তারপর আমাদের চলচ্চিত্রের প্রকৃত সময় আবার ফিরবে। কাজ সহজ হবে।।আমরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারব। আমাদের চলচ্চিত্র আরও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর হবে।
মেগাষ্টার উজ্জ্বল বলেন, এখন ডিজিটাল যুগে আমাদের দেশে চলচ্চিত্রের নানাদিকের প্রশিক্ষণে কোনো একাডেমি বা ইনস্টিটিউট নেই।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের পথে এগোতে গেলে এগুলো আবশ্যক। আমাদের ফিল্ম ডেভেলপের জন্য এফডিসি মানে স্ট্রাকচার আছে। নির্মাতা শিল্পী কলাকুশলী সবই আছে। এখন শুধু আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা দরকার। তাহলেই চলচ্চিত্রের উন্নয়ন অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করি। যতটুকু জেনেছি এফডিসিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। এইগুলোর ব্যবহার হচ্ছে না। কি ভাবে ডিজিটাল মেশিনগুলো পরিচালিত হবে তার দক্ষ কারিগরের অভাব রয়েছে।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এফডিসি যেহেতু সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান তাই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সার্বিক দিক এফডিসির কাছেই ন্যস্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের দুটি দিক আছে। একটি হলো কন্টেন্ট, অন্যটি মার্কেটিং। চলচ্চিত্র হলো কন্টেন্ট আর সিনেমা হল হলো মার্কেটিং। কন্টেন্ট তৈরির পর দর্শকের কাছে তা প্রদর্শনের জন্য মার্কেটিং করা হয় সিনেমা হলে। এখন মানুষের রুচি পাল্টেছে। সিনেমা দেখার মাধ্যমও বদলেছে। এখন স্বল্প আসনের সিনেপ্লেক্স কালচার চালু হয়েছে। এ মনোপুলি সেক্টরে আয় করাও খুব সহজ। তাই এফডিসিকে সারা দেশে সেন্ট্রাল সার্ভারের মাধ্যমে সিনেপ্লেক্সের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হোক। বেসরকারি ভাবে সিনেপ্লেক্সে ব্যবসার পাশাপাশি সরকারি ভাবেও সিনেপ্লেক্সে ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করলে ফিল্ম উপকৃত হবে।
তিনি চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সরকার যেন এফডিসিকে একটি ফান্ড দেয় তার প্রস্তাব করে বলেন, সেই ফান্ড থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া যেতে পারে। যৌথ প্রযোজনার ব্যবস্থা করেও চলচ্চিত্রের প্রাণসঞ্চার করা সহজ হবে। এফডিসির অধীনে সারা দেশে থাকা সিনেপ্লেক্সগুলোতে সেই চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হলে চলচ্চিত্রের সব পক্ষ এখান থেকে যথাযথ সুবিধা পাবে। তাই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে এফডিসির এখন প্রধান দায়িত্ব হতে হবে প্রোডাকশনের পাশাপাশি মার্কেটিং উইং তৈরি করা। একই সঙ্গে ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করা। প্রোডাকশনের পাশাপাশি যদি মার্কেটিংয়ের দায়িত্ব এফডিসি নেয় তাহলে আমি মনে করি নিয়মতান্ত্রিকভাবে উৎপাদন ও প্রদর্শন ব্যবস্থায় ক্ষেত্রে সমন্বয় ঘটাতে পারবে এফডিসি এবং এতে চলচ্চিত্র ব্যবসা লাভজনক হবে।
তাছাড়া এখন চলচ্চিত্র প্রদর্শনের নতুন মাধ্যম ওটিটিও চালু হয়েছে, এখানেও মার্কেটিং করতে পারে এফডিসি। এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছে দেশীয় চলচ্চিত্রের ব্যাপক চাহিদা রযেছে। তাই বিভিন্ন অ্যাম্বাসির কালচারাল উইংয়ের সহায়তায় বিদেশে নিয়মিত আমাদের ছবি মুক্তি দিতে পারলে চলচ্চিত্র ব্যবসায় দৈন্যদশা বলে আর কিছুই থাকবে না। আমাদের চলচ্চিত্র আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ দেশের সব সেক্টর যেমন অন্যায় দুর্নীতিতে নিম্নগামী হয়েছে, চলচ্চিত্রও তার বাইরে নয়। এখানেও যথেষ্ট দলীয়করণ হয়েছে। আসলে তখন চলচ্চিত্রের যোগ্য লোকজনকে কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়নি। এ বিষয়গুলো পত্র-পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়াও এসেছে। সবাই দেখেছে। প্রকৃতপক্ষে ক্যামেরার সামনে কোনো কাজ হয়নি। যা হয়েছে পেছনে। এতে করে চলচ্চিত্রের প্রকৃত লোকজনের হাতে কোনো কাজ ছিল না। স্বৈরাচার সরকার দেশে থাকলে দেশের অধঃপতন হয়, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। চলচ্চিত্রও এর বাইরে ছিলো না।
বিএনপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক উজ্জ্বল বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান প্রথা প্রবর্তন, চলচ্চিত্রের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কল্যাণ ফান্ড গঠন, একুশে পদক প্রথা চালু থেতে শুরু করে সবই করেছেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে চলচ্চিত্র নিয়ে আমার আলাপ-আলোচনা হতো। তিনি দেশের এ প্রধান ও বড় গণমাধ্যমটির উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তাঁর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে আমি সবসময় যুক্ত ছিলাম। এখন আমি দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আগামীতে বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে চলচ্চিত্রের সময়োপযোগী সার্বিক উন্নয়নে আমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পদক্ষেপ নিবো।