বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান তিনি। প্রথম টেস্টেরও সদস্য ছিলেন তিনি। ক্রিকেটার থেকে এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ১৬তম সভাপতি হিসেবে পথচলা শুরু হচ্ছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের। গতকাল বিকালে জরুরী বোর্ড সভায় তাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন বাকি বোর্ড পরিচালকরা। আপাতত অল্প সময়ের জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তবে এই অল্প সময়েই নিজের অভিজ্ঞতার ছাপ রাখতে চান বুলবুল।
তিনি বলেছেন, একটা কুইক টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলতে চান। আগামী অক্টোবরে বিসিবি’র বার্ষিক নির্বাচন। সেক্ষেত্রে সভাপতি হিসেবে বুলবুল সময় পাচ্ছেন মাত্র ৩ মাস। এই অল্প সময়ে কিভাবে নিজের ছাপ রাখতে চান এই প্রশ্নের উত্তরে বুলবুল বলেন, ‘যেহেতু সময়টা কম, আমরা জানি যে টেস্ট ম্যাচ পাঁচদিনের হয়। ওয়ানডে হয় সাত ঘণ্টার। আমি একটা কুইক টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলতে এসেছি। সো একটা ভালো টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলব, যেটা আপনারা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন। চেষ্টা করব, ক্রিকেটটা যাতে সবাই খেলতে পারে, যাতে সবার খেলা হয়। যেন একটা স্টেটমেন্ট হয়, ক্রিকেটটা সবার জন্য। এই ধারাটা শুরু করে দিয়ে যেতে চাই।’
গেল কয়েক বছরে বিসিবি আসতে চান কিনা এমন প্রশ্ন বহুবার শুনতে হয়েছে বুলবুলকে। গতকাল সভাপতি হয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানালেন, তার নিজেরও ইচ্ছা ছিল দেশের ক্রিকেটে কাজ করার। এমনকি তিনি এজন্য প্রস্তাবের অপেক্ষাতেই ছিলেন। এ কারণেই গত মাসের শেষদিকে ক্রীড়া উপদেষ্টা যখন তাকে দেশের ক্রিকেটে কাজ করার প্রস্তাব দেন তখন বুলবুল সঙ্গে হ্যাঁ বলে দেন।
তবে দেশের ক্রিকেটে যখন কাজই করতে চান তাহলে কেনো এত স্বল্প সময়ের জন্য আসলেন। এই প্রশ্নের উত্তরে বুলবুল বলেন ‘আমি পেশাদার লোক, ক্রিকেট আমার পেশা। একসময় খেলতাম এরপর থেকে ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করছি। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। যদি এতে ভালো করি আইসিসিতেও গিয়েও কাজ করতে পারবো বা এখানেও করতে পারি যদিও জানি না এখনও কি হবে। তবে আপাতত আমার লক্ষ্য এই স্বল্প সময়ে কাজ করা।’
দায়িত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে বুলবুল বলেন, ‘এই প্রথম গত মাসের এপ্রিল মাসের শেষদিকে আমি একটা কল পাই ন্যাশন্যাল স্পোর্টস কাউন্সিল থেকে এবং বলা হয় যে আপনাকে একটা সুযোগ দেওয়া হবে, আপনি কী সুযোগ গ্রহণ করবেন? যখন এই কল পেয়েছি, তখন আর পেছনে তাকাই নি। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল কিভাবে এই কলটাকে রেসপেক্ট করতে পারি। তারপর পর্যায়ক্রমে ক্রিকেট বোর্ডের ডাইরেক্টররা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। এই দায়িত্বটা বাংলাদেশের ক্রিকেট না, ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কী ক্রিকেট আছে চেষ্টা করব, সেটা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। আমি বিশ্বাস করি, ১১ জন ক্রিকেট খেলে না, বাংলাদেশের সবাই ক্রিকেট খেলে।’
নাটকীয় ৭২ ঘণ্টা
গুঞ্জন আগেও ছিল, তবে গেল বুধবার সকাল থেকে সেটা আরও জোরালো হয়। ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে সেটাই সত্যি হলো, ফারুক আহমেদের জায়গায় বিসিবি’র নতুন সভাপতি হলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ঠিক ৯ মাস ৯ দিন আগে এমন দিনে বিসিবিতে সভাপতি হয়ে আসেন ফারুক। হাসি মুখে নতুন দায়িত্ব নিতে ঠিক একই পথে গতকাল বিসিবিতে ঢোকেন বুলবুল! তার পিছনেও স্লোগান, ‘বুলবুল ভাইয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম।’ এসবই ঘটেছে মাত্র ৭২ ঘণ্টার নাটকীয়তায়।
বুধবার দুপুর নাগাদ জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইছে না ফারুক আহমেদ বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যান। এ নিয়ে অবশ্য ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। তবে ঐদিন রাতেই ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাসায় যান ফারুক। সেখানে ফারুককে উপদেষ্টা সরাসরি জানিয়ে দেন, তারা ফারুককে আর বিসিবি’র সভাপতি হিসেবে দেখতে চান না। পরোক্ষভাবে তাকে পদত্যাগ করতেই বলা হয়েছিল। কিন্তু পরের দিন ফারুক স্পষ্ট জানিয়ে দেন পদত্যাগ করবেন না। ফারুক বলেন, ‘পদত্যাগ তো করার কারণ নেই! আমি কেন পদত্যাগ করবো! পদত্যাগ করার কোনো কারণ তো কেউ দেখাতে পারিনি।’ অবশ্য তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সব অস্ত্রই প্রস্তুত ছিল। ফারুকের পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত প্রকাশ হতেই জানা যায়, ৮জন পরিচালক তার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে চিঠি দিয়েছেন। অথচ ওই ৮ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন তখনও দেশের বাইরে ছিলেন।
এর মধ্যে জানা যায়, আইসিসি’র চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে দেশে এসেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। যদিও প্রথমে ব্যক্তিগত কাজে এসেছেন বলে শোনা যাচ্ছিল তবে ক্রমশ প্রকাশ হতে থাকে এবার বুলবুল এসেছেন সরকারের ডাকেই! ক্রীড়া উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বুলবুলের কাছে বিসিবিতে কাজ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়। কয়েকটি গণমাধ্যমেই বুলবুল জানান বিসিবিতে যে কোনো কাজের জন্য তিনি প্রস্তুত! এতে করে ফারুকের বিদায় আরও নিশ্চিত হয়ে যায়। ওইদিন রাতেই পরিচালক হিসেবে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। রাত ১১টায় প্রজ্ঞাপন জারি করে তারা। গতকাল শুক্রবারেও কার্যকর ছিল ক্রীড়া পরিষদ। এদিন সকালে তারা আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে নতুন কাউন্সিলর হিসেবে মনোনিত করে। এরপর বিকালে বোর্ড সভায় পরিচালক ও পরে বুলবুলকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন বোর্ড পরিচালকরা।