ঠাকুরগাঁওঃ স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সংঘটিত সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে একটি দল সংখ্যালঘু বলে ফায়দা লুটে নিয়েছে। তারাই তাদের ক্ষতি করেছে, সম্পদ লুটে নিয়েছে, বাড়ি ঘর দখল করেছে, নির্যাতন করেছে। তারা এসব করে ইসলামপন্থীদের উপর দায় চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। ইসলামপন্থীরা এসব করে না, অন্যের সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করে না, অন্যকে নির্যাতন করে না। আমরা জাতিসংঘের কাছে দাবি জানাচ্ছি, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে যত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার সকল ঘটনার তদন্ত করে অপরাধীদের বিচার করা হোক।
ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জেলা স্কুল বড় মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত এসব কথা বলেন। জেলা আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধানের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি আলমগীর হোসেনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুুবুর রহমান বেলাল, ঠাকুরগাও জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম, সাবেক শিবির সভাপতি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য দেলোয়ার হোসেন।
আরো বক্তব্য রাখেন, দিনাজপুর জেলা আমীর আনিসুর রহমান, পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের আমীর ইকবাল হোসাইন, হিন্দু ধর্মীয় নেতা যতীস চন্দ্র রায়, ওলামা নেতা মুফতি হারুনুর রশিদ কাসেমী, ঠাকুরগাঁও শহর শিবির সভাপতি আসাদুল্লাহ গালিব, শহীদ আবু রায়হানের পিতা ফজলে আলম রাশেদ, ঠাকুরগাও শহর জামায়াতের আমীর শামসুজ্জামান শামীম প্রমুখ। সম্মেলনে একজন হিন্দু ধর্মীয় নেতা উপস্থিত হয়ে জামায়াত-শিবিরের আচার ব্যবহার ও শৃঙ্খলার প্রশংসা করে তাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ। ছোট এই বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষ। কিন্তু জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে পারিনি। তাদের হাতকে কর্মের হাতে পরিণত করতে পারলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত।
জামায়াতের ১১ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুন, লুন্ঠন ও নির্যাতনের সাড়ে ১৫ বছর পর মানুষ স্বস্তির নিশ^াস ফেলছে। এই সাড়ে ১৫ বছরে অনেকে জীবন দিয়েছে, অনেকে আহত হয়েছে, অনেকের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। জামায়াতে নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের ঘর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কুরআনের পাকি আল্লামা সাঈদীকেও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হলো। তার জানাযায় যেন মানুষ না আসতে পারে এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করার পরও বৃষ্টির মধ্যে মানুষ জানাযায় অংশ নিয়ে তাকে বিদায় দিয়েছে।
আমীরে জামায়াত বলেন, “বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর” স্লোগান দিয়ে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছিল। তারা বুক পেতে অস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়েছিল। এক মন্ত্রীকে পুলিশ বলেছিল, একটি গুলি করি একজন মরে আর চারজন দাঁড়িয়ে যায়। এমন জাতি তৈরী হওয়ায় আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতেও যাতে জাতির জন্য এমন ছেলেরা দাঁড়িয়ে যায় সে আহবান তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, কারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর চারদিন দেশে কোন সরকার ছিল না। ইসলামপন্থীরা চারদিন সারা দেশে পাহারা দিয়েছে। দুর্ঘাপূজায় গন্ডগোল করতে চেয়েছিল। আমরা জামায়াতের পক্ষ থেকে তাদের পূজায় পাহারা দিয়েছি। আমরা চাই না কোন ধর্মীয় উপাসনালয়ে পাহারা দেয়া লাগুক। মসজিদে পাহারা দেয়া না লাগলে মন্দিরেও যাতে পাহারা দিতে না হয় এমন নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে চাই।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ১৬ ডিসেম্বর তাদের বিজয় বলে দাবি করেছে। সেখানে তিনি একটিবারও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেননি। তার কথার বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করেনি। প্রতিবেশী দেশ প্রতিবেশীর মতো থাকুক। কিন্তু তারা মাঝে মাঝে বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশের তরকারিতে লবন দিতে আসে। আমরা আমাদের তরকারিতে আমরাই লবন দিব।
তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ছাত্রদের সার্টিফিকেট দেয়া হয় কিন্তু চাকরি দেয়া হয় না। ছোট একটি দাবির জন্য রাস্তায় নেমেছিল কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না করে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হলো। অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয়েছে, চোখ হারিয়ে কাতরাচ্ছে। তাদের এক অধিকারের সাথে সকল অধিকার এক হয়ে মানুষের মুক্তির আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
আমীরে জামায়াত বিগত তিনটি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ১৪ সালের নির্বাচনে তারা ১৫৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নিয়েছিল। আর ১৮ সালে রাতের বেলায় নির্বাচন হয়েছে এবং ২৪ এর ভোট হয়েছে আমি আর ডামি মিলে। এ সরকার ছিল ডামি সরকার। এ জন্য সামান্য ¯্রােতেই চলে গেছে। তারা আবার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তারা আত্মস্বীকৃত খুনি। এখনো তারা খুনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি বলতে চাই, এ চ্যাপ্টার ক্লোজড। শ্রীলংকার সরকারও পালিয়ে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। দেশের পতিত সরকারও আর আসবে না। মানুষকে বোকা ভাববেন না। দেশটাকে এখন গড়তে হবে। আমরা চাই সবাই মিলে দেশ গড়তে। তবে যারা লুন্ঠন করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে সেই টাকা ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, ঠাকুরগাও জেলা গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এখানে মেডিকেল কলেজ নেই, বিশ^বিদ্যালয় নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো, এ জেলার দিকে নজর দিন। অন্তত একটি মেডিকেল কলেজ দিয়ে শুরু করুন। আমরা চাই সকল জেলায় সমান উন্নয়ন হবে। প্রধানমন্ত্রীর জেলায় সকল উন্নয়ন যাবে না। আমরা চাই আদালতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। সকল জেলায় সমান উন্নয়ন হবে। ইনসাফের ভিত্তিতে দেশ চালাতে পারলে দেশ বিশে^ একটি রোল মডেলে পরিণত হবে। এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, নারী-শিশু সবাই সম্মানের সাথে বসবাস করবে।
এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি উল্লেখ করে তিনি ঠাকুরগাঁওবাসীর উদ্দেশে বলেন, এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি। আগামীতে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চেষ্টা চালাতে হবে। আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত, ঘুষ মুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত সাম্যের দেশ গড়তে চাই। এ জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। এ জন্য আপনাদের দোয়া চাই, আপনাদের পাশে চাই, আপনাদের সহযোগিতা চাই, আমরা অন্যায় করলে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনবেন। আল্লাহর হুকুম থাকলে আমরা একটি ন্যায়সঙ্গত সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ জন্য তিনি ঠাকুরগাঁওবাসীর সহযোগিতা চান।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ কথা বলতে পারেনি, ভোট দিতে পারেনি, অধিকার পায়নি। যারাই কথা বলেছেন, তাদের গুম করা হয়েছে অথবা কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ অনেক আন্দোলন করেছে কিন্তু কোন আন্দোলন সফল হতে পারেনি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশে গিয়ে পালিয়েছেন। আল্লামা সাঈদীর ভবিষ্যত বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে যারা পালিয়ে গেছে তারা কেউ ফিরতে পারেনি। আওয়ামী লীগও ফিরতে পারবে না। বাংলাদেশের মাটিতে আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে দেয়া হবে না। কোন ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে দিবো না। সরকারের প্রতি আহবান জানাই, সরকারের ভেতরে বাইরে ফ্যাসিবাদের শক্তি যে যেখানে আছে অবিলম্বে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর দক্ষ যোগ্যদের উপযুক্ত জায়গায় নিয়োগ দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, যারাই নৈরাজ্য করবে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণ মোকাবেলা করবে। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, স্বৈরাচার ও দখলবাজ মুক্ত বাংলাদেশ। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে ইনসাফ ও ইসলামের বাংলাদেশ। মানুষ ইসলামী সরকার চায়। সেই আন্দোলনে ঠাকুরগাঁওয়ের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করার জন্য তিনি আহবান জানান।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে নিরঞ্জন বাবুসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশবাসী সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বন্ধু সংগঠনের এক নেতা ঐক্য বিনষ্ট করার মতো কথা বলছেন। তিনি বলছেন, জামায়াত ব্যাংক দখল করেছে। দেশবাসী জানে, জামায়াত ব্যাংক দখল করেনি। জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলী ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দখলদার এস আলম গ্রুপ পালিয়ে গেছে। ভারতীয় দালালের মতো কেউ কেউ বক্তব্য দিচ্ছেন। এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে বিভেদ না ছড়ানোর জন্য তিনি সংম্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মুখে হাসিনা পালিয়ে গেছে। সজাগ থাকতে হবে, আবার যাতে হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট তৈরী না হয়। ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
অধ্যাপক মাহবুুবুর রহমান বেলাল বলেন, এমন কোন অপকর্ম নেই আওয়ামী লীগ ও হাসিনা করে নাই। গুম, হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে দেশকে যারা অশাস্তিতে পরিণত করেছিল তাদের সবার বিচার করতে হবে। এদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। যারা ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছেন তারা জাতীয় গাদ্দারে পরিণত হবেন। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচনের দাবি জানান।
মাওলানা আব্দুল হাকিম বলেন, আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা দিয়েছে। স্বাধীনতার সময় আমি দশ বছরের শিশু হওয়া সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগ এনে পুলিশ প্রশাসন দিয়ে আমাকে হয়রানি করা হয়েছে। এভাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আমাদের নির্যাতন করেছে কিন্তু ইসলামী আন্দোলনকে দমাতে পারেনি। জালিম আওয়ামী লীগ আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত নির্যাতন চালিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করতে চেয়েছিল। তাদের চক্রান্ত আল্লাহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আপনারা আমার জন্য দোয়া করেছেন, এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা ঠাকুরগাঁওকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত শান্তির জেলায় পরিণত করবো। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে বিমানবন্দর ও বিশ^বিদ্যালয় চালু করার দাবি জানান। সেই সাথে কৃষি ইনস্টিটিউট করারও দাবি জানান।
হিন্দু ধর্মীয় নেতা যতীস চন্দ্র রায় বলেন, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের আচার আচরণ ভালো। তাদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে আমি সমাবেশে বক্তব্য দিতে এসেছি। বিভিন্ন ধর্মের লোকজন বিভিন্ন নামে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে। আমি কোন দল করি না। জামায়াতের সততা, ভদ্রতা ও ন¤্রতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমরা জামায়াতের মাধ্যমে সরকার গঠনের চেষ্টা করবো। কারণ তারা দুনীতি করে না, ঘুষ খায় না এবং অন্যায় করে না।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান সম্মেলন সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়তে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে পথসভায় আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান
পতিত স্বৈরাচারী সরকার দেশের প্রতিটি অঙ্গকে ধ্বংস করে পালিয়ে গেছে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কল্যাণময় রাষ্ট্র নির্মাণে সকলকে দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে জাতির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র ১৮ কোটি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে ইনশাআল্লাহ। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অপার সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কে গড়ে তোলা হবে। পতিত স্বৈরাচারী সরকার দেশের প্রতিটি অঙ্গকে ধ্বংস করে পালিয়ে গেছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার ওইসব সংস্কার কাজে বলিষ্ট ভুমিকা পালন করছেন। আমাদের উচিত সরকারের এসব সংস্কার কাজে সহযোগিতা করা, সময়, সুযোগ ও সমর্থন দেয়া। তিনি বলেন, একাত্তর সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বলা হয়েছিল বৈষম্য দূর করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৈষম্য তো দূর হয়ইনি, বরং গণতান্ত্রিক নয়, স্বৈরতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আবির্ভূত হয়েছে। তারা কখনই আমাদের তোয়াক্কা করে না। তারা জনগণের আমানতকে পকেটে ঢুকিয়েছেন। তারা তসরূফ করেছেন, তারা চুরি করেছেন, তারা ডাকাতি করেছেন, তারা অগ্নিসংযোগ, খুন ও লুন্ঠন করেছেন। গত ৫৩ বছরে তারা জাতিকে বিভক্ত করার কাজ করেছে। ওই বিভক্তি আমাদের সর্বনাশ করেছে। এখন সময় ঐক্যের। সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি এই আসনের মরহুম সংসদ সদস্য, জামায়াতের নেতা অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল কাফীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এছাড়া তিনি বীরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ ও সম্প্রতি সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত মরহুম খোদা বক্সের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। বীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর ক্বারী আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল পরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাহাবুর রহমান বেলাল, অঞ্চল টীম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান, ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও দিনাজপুর জেলা সেক্রেটারি মুহাদ্দিস ডক্টর এনামুল হক, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা রবিউল ইসলাম, জেলা অফিস সেক্রেটারী শহিদুল ইসলাম খোকন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি জাকিরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রাশেদুন্নবী বাবু, সাভার থানা আমীর আব্দুল কাদের, কাহারোল উপজেলা আমীর মাওলানা তরিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এ কে এম কাউসার, জামায়াত নেতা এস এম হাদীউজ্জামান, বীরগঞ্জ উপজেলা সেক্রেটারী মন্জুরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি কে এম দেলোয়ার হোসেন, বীরগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি হামিদুর রহমান প্রমূখ।
দুপুর ১২ টায় আমীরে জামায়াত বীরগঞ্জের দলুয়া এলাকায় মরহুম খোদা বক্সের কবর জিয়ারত করে তাঁর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শোকার্ত পরিবারকে সান্ত¦না প্রদান করেন এবং মরহুম খোদা বখসের জন্য মহান আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করেন। এরপর আমীরে জামায়াত ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে যোগ দেন।
দায়িত্বশীল সমাবেশের আগে
গতকাল সকালে দিনাজপুর জেলা জামায়াত কার্যালয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান।