নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকতা না পাওয়া পর্যন্ত বিএনপিকে কাজ করতে হবে’ মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার বিকালে শহীদ বুদ্দিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা্য় দলটির মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ আপনাদের সামনে অনেক কাজ… অনেকে মনে করেছেন যে, হাসিনা পালিয়ে গেছে কাজ শেষ হয়ে গেছে… না। কিছুক্ষন আগে আমাদের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলছিলেন যে, যে আমাদের এই আন্দোলন চলবে… নির্বাচন পর্যন্ত।”
‘‘ না, না.. এই নির্বাচনের পরে আরও বহু বহু দিন… যতক্ষন পর্যন্ত আমরা একটা গণতন্ত্র সংস্কৃতিতে পরিণত করতে পারব, কালচারে পরিণত করতে পারব…. এটা একটা ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়াবে… ওই জায়গায়তে আমাকে পৌঁছাতে হবে। তাই আমাদের কাজ অনেক বেশি আছে।”
নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আসুন আজকে এই দিনে আমরা শপথ নেই… যারা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা এই শপথ গ্রহন করি যে, আমরা আমাদের গড়ে তুলব একটি উপযোগী রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেব, গণতন্ত্রের একজন কর্মী হিসেবে, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে।”
‘‘ সেই সঙ্গে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের কর্মী হিসেবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কর্মী হিসেবে আর আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া্উর রহমানের সত্যিকার কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।”
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এই আলোচনা সভা হয়।
শনিবার বুদ্দিজীবী দিবসের দিন সকাল ১১টায় বিএনপির নেতৃবৃন্দ নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
‘গণতন্ত্র মানে এই নয়…’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গণতন্ত্রের কথা আমরা বলছি, সেই গণতন্ত্র একটা কথার কথা নয়। এটা একটা কালচার-এটা একটা সংস্কৃতি।আপনি-আমি কিভাবে কথা বলব, আমি আমার প্রতিবেশির সাথে কেমন কথা বলব, আমার রাজনীতির প্রতিপক্ষের সঙ্গে কিভাবে কথা বলব সেই বিষয়গুলো আমাদেরকে গণতন্ত্রের ভেতর দিয়ে শিখতে হবে।”
‘‘ গণতন্ত্র মানে এই নয় যে, আওয়ামী লীগ করলে তাকে গলা কেটে ফেলো আর বিএনপি করলে তার মুন্ড ছেদ করো.. তাহলে সেটা কিন্তু গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে পরমত সহিষ্ণুতা। তোমার কথা বলার অধিকার আছে, আমার বিরুদ্ধেও কথা বলার অধিকার আছে… আমি সেটাকে রক্ষা করবো এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।”
‘সময়টা কঠিন সময়’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই সময়টা সবচাইতে কঠিন সময়… আপনার একটা পদক্ষেপ যদি ভুল হয় আপনি পেছনে পড়ে যাবেন, খাদে পড়ে যাবেন। যদি সঠিক পা দিতে পারেন তাহলে আপনি সামনে এগিয়ে যাবেন।”
‘‘ আমার অনুরোধ থাকবে… এই দিবসগুলো আপনারা অবহেলা করবেন না… জানার চেষ্টা করবেন। অনেক জানেই না কি হয়েছিল… ওই দিন কি তালি মারার দিবস না তালি মারার দিবস না, ওই দিন কি মিলাদ করার দিবস না খিচুড়ি খাওয়ার দিবস….। আমাদের দেশের সবচাইতে বরণ্যে ব্যক্তিদেরকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচাইতে ভালো শিক্ষকদেরকে…. তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো…।
তিনি বলেন, ‘‘মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের তুলে নিয়ে গেছে এই যে ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে তুলে নিয়ে যেতো… যেমন আমাদের গুম করে নিতো ঠিক ওইভাবে তাদের(শহীদ বুদ্ধিজীবীদের) তুলে নিয়ে গেছে। বাসায় থেকে নেয়ার সময়ে বলছিলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন… এই কিছুক্ষন পরে চলে আসবে তো… এভাবে নিয়ে গেছে… নেয়ার পর আর ফিরে আসেনি… রায়ের বাজারে তাদের হাত-পা বাধা মরদেহ পাওয়া গেছে মহিলা-পুরুষ সকলের। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে বুদ্ধিজীবীদের কেনো প্রাণটা দিতে হলো।”
‘‘ তখনও তখনও এই আয়না ঘরের মতো তখনও ঘর ছিলো… এই আয়না ঘরে কেনো নিয়ে যাওয়া হয়েছে ছেলেদের, কেনো নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদেরকে… একটাই উদ্দেশ্য ছিলো তাদেরকে ভয় পাইয়ে দেয়া, তাদেরকে শেষ করা, তাদেরকে ধবংস করা। কেনো? একজন ব্যক্তিকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করা… হাসিনার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে হবে সেজন্য আয়না ঘরে নিয়ে যাওয়া হতো… তাই না।”
‘একাত্তর আমাদের ভুলে গেলে চলবে না’
একাত্তরে শহীদ বুদ্দিজীবী এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানসহ বীর শহীদদানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি কিছুক্ষন আগে একজনের সাথে কথা বলছিলাম যে, এখন একটা প্রবণতা জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, একাত্তর একটু পেছনে রাখা। আমার মনে হয়, এটা আরেকটা ওই ষড়যন্ত্রের অংশ দেশের মূল ইতিহাস থেকে জাতিকে দূরে সরিয়ে দেয়া। যেমন ‘৪৭ সালে পার্টিসেনকে অনেকে বলেন যে, এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো….।”
‘‘এখন আবার একটা লক্ষ্য করছি যে, একাত্তর সালকে পেছনে রাখা। আমরা মনে করি এটা ইতিহাস বিকৃতির একটা…. এটার কোনো প্রমাণ নেই… আমার কাছে এটা মনে হয়েছে। এই বিষয়টা নিয়ে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। আমাদেরকে মূল যে ইতিহাস… আজকে এই স্বাধীন বাংলাদেশ, আজকে ইতিহাস নিয়ে এসে আমরা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সেই ইতিহাস যেন বিকৃত না করি। গত ১৫ বছর ধরে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে…ঠিক তেমনি করে এখন যাতে ইতিহাস বিকৃত না হয় সেজন্য সকলকে সজাগ থাকার জন্য অনুরোধ করছি।”
‘একজন উপদেষ্টার বক্তব্যে নিন্দনীয়’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ একজন উপদেষ্টা যখন এই কথা বলেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য কাজ করছে এটা অত্যন্ত ঘোরতর অভিযোগ। আমি তীব্র ভাবে এর নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি এবং আমি মনে করি যে, এই ধরনের উক্তি তার প্রত্যাহার করা উচিত।”
‘‘ আমি মনে করি যে, দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে বা রাজনীতিকে আপনাদের প্রতিপক্ষ বানাবেন না। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদেরকে সহযোগিতা করছে… এটা আপনাদের দায়িত্ব সেখানে আপনি যদি বলেন যে, এটা ব্যর্থ করার জন্য কাজ করছে… আমরা হাজার বার বলেছি, আমাদের চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা বলেছি, এই সরকার হওয়া ব্যর্থ হওয়া মানে জনগন ব্যর্থ হয়ে যাবে, আমরা ব্যর্থ হয়ে যাবো। তাহলে এইরকম কথা কেনো বলবেন আপনি?”
‘প্রতিটি মুহূর্তে সতর্ক থাকা চাই’
বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে দেশে ফেরা বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ প্রতিটি মুহুর্ত এখন আমাদেরকে সর্তকতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। আমাদের প্রতিটি কথা আমাদেরকে মেপে কথা বলা দরকার। আমরা এমন কোনো কথা বলব না যে, আমাদের এই যে বিজয়কে নষ্ট করে দেয়, অর্জনকে বিনষ্ট করে দেয়। আমাদের দেশের ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে সে দ্রুত কাজ করছে.. সে লন্ডনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটা মিটিংও করেছে এরমধ্যে ডিজিটালি…।”
‘‘ দেখবেন যে, তারা(আওয়ামী লীগ) অনেক অপপ্রচার করছে, মিথ্যাচার করছে যেগুলো বাংলাদেশের জন্য, এই বিপ্লবের জন্য অত্যন্ত উল্টো কথা। তাই আপনাদেরকে গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভেতর দিয়ে আপনাদেরকে কথা মধ্য দিয়ে জবাব দিতে হবে।”
ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের মিথ্যাচার-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য্ অধ্যাপক মামুন আহমেদ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।