মিথ্যার বেড়াজাল নির্মান করে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে ভারত কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে তারা সফল হতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ শনিবার সকালে (ডিসেম্বর ০৭, ২০২৪) “আমরা বিএনপি পরিবার”-এর উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে আহত ব্যক্তিদের খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও “আমরা বিএনপি পরিবার”-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আহতদের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দেন রুহুল কবির রিজভী।
এরপর উপস্থিত সাংবাদিকদের বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের জন্য মায়াকান্না করছে ভারত। তিনি বলেন, পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের জন্য মায়াকান্না করছেন পার্শ্ববর্তী দেশটির রাজনীতিবিদরা, নীতিনির্ধারকরা এবং আরও অনেকেই বিশেষ করে আত্মা-বিক্রিকারী মিডিয়ার লোকজনরা। বাংলাদেশ নাকি হিন্দুদের বাড়ি পোড়ানো হচ্ছে, বাংলাদেশে নাকি হিন্দুদেরকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে— এই ধরনের ডাহা অসত্য মিথ্যার বেড়াজাল নির্মান করে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে তারা সফল হতে পারছে না, তাই এখন হিংসা-প্রতিহিংসার জ্বালায় প্রতিদিন অপপ্রচারের যে কথাগুলো আমরা জানতে পারছি— তাতে মনে হচ্ছে যে, ভারতকে আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে জানতাম, যে ভারতে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয় বলে আমরা জানতাম, যে ভারতে অনেক জ্ঞানী গুণী মানুষের দেশ, সেই দেশটিকে এখন মনে হচ্ছে— সেখানে হিংস্র ঘাতক এবং প্রচন্ড রক্তপিপাসু মানুষরা সেখানে বাস করে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনাকে দিয়ে তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। সেই স্বার্থ রক্ষার জন্যই তারা শেখ হাসিনার জন্য যে কুমিরের মায়াকান্না করছেন, এটাই এখন সত্য প্রমাণিত হচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী দেশের কঠোর সমালোচনা করে করে বিএনপি’র এই মুখপাত্র বলেন, ‘ওরা (ভারত) এতো দূর গেছে যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার যে পতাকা— সেই পতাকা ছিঁড়ে ফেলেছে। কূটনৈতিক নেতৃবৃন্দের গায়ে হাত তুলেছে, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী এটা ভয়ংকর রকমের আন্তর্জাতিক গুরুতর অপরাধ, সেই অপরাধ তারা করেছে। তারা একবারও ভাবেনি শেখ হাসিনা এই দেশে কি নিষ্ঠুরতা, কি নির্দয়তা, কি হিংসাশ্রয়ী আচরণ করেছে নিজ দেশের নাগরিকদের সাথে।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, আজকে বার্ন ইউনিটে যে দৃশ্য দেখলাম, এই দৃশ্য বর্ণনা করা যায় না, গণআন্দোলনের সময় আমি কারাগারে ছিলাম, বের হয়ে অনেক হাসপাতালে গিয়েছি কিন্তু এতো বর্বরতা এতো মর্মান্তিক বুকফাটা কান্না বেরিয়ে আসে এই দৃশ্য দেখলে, কারো মুখ ঢাকা, মুখ খুললেই মনে হয় এযেনো কোনো হরর ছবির দৃশ্য দেখছি, কে নিবে তাদের দায়িত্ব? কি করে তারা বাঁচবে? এই পরিস্থিতি তৈরি করে গেছেন পলাতক স্বৈরাচার। আর তাদের জন্য এতে মায়া কান্না? তার জন্য আজকে সীমান্তে সীমান্তে এসে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ে তারা নাকি বিক্ষোভ করবে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য তারা ইসকনের নামে যে চিন্ময় ইসকন থেকে বিতারিত অপকর্মের কারণে সরকার তাকে গ্রেফতার করেছে তার জন্য মনে হচ্ছে ভারতের দিল্লি থেকে শুরু করে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে পর্যন্ত কান্নার রোল পড়ে গেছে। এইভাবে চলতে পারেনা। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র, সার্বভৌম রাষ্ট্র। রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশকে কেউ মাথা নত করাতে পারবে না। এই বাংলাদেশকে ভয় দেখিয়ে চোখ রাঙিয়ে নতজানু করানো যাবে না। এই বাংলাদেশে অপরাধীদের বিচার হবে, যারা আমাদের ভাইদেরকে পঙ্গু করেছে, যারা অপরাধ করেছে— মন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের অপরাধীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।
জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে সংশ্লিষ্ট আহত পরিবারের সাথে সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন— “আমরা বিএনপি পরিবার”-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, “আমরা বিএনপি পরিবার”- এর আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, সদস্য মাসুদ রানা লিটন, মুস্তাকিম বিল্লাহ, শাকিল আহমেদ, ফরহাদ আলী সজীব, রুবেল আমিন, শাহাদত হোসেন প্রমুখ।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন— বিএনপি’র সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, জাতীয়তাবাদী যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাবিবুল বাশার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসনাইন নাহিয়ান সজীব, ছাত্রদল নেতা ডাঃ আওয়াল, নাহিয়ান হোসেন, শারিফুল ইসলাম, মোহান, সেতু, মিসবাহ, জাকির, মাসুদসহ জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ডাক্তারবৃন্দ।▫