সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘পরাজিত ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা বিদেশি প্রভু ও বাংলাদেশের এজেন্টদের দিয়ে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনাদের মধ্যে যেন কোনো অনৈক্য না আসে। আপনাদের ঐক্যে ফাটল ধরে যাতে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।’ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে দেশে ফিরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘প্রবাসে নির্বাসনে থাকার পর আপন মাতৃভূমিতে আসতে পেরে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে হাজার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। সেইসঙ্গে ছাত্র-জনতার মহান বিপ্লবে যারা শহীদ হয়ে ভারতের দালাল শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের উৎখাত করেছেন তাদের বিদেহী আত্মার উদ্দেশ্যে পরম কৃতজ্ঞতা ও অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি’।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিপ্লবে শহীদদের কোনোদিনও ভুলে যেতে পারি না। ইনশাল্লাহ এই শহীদদের আমরা কখনো ভুলবো না।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আমি আমার মতো করে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে লড়াই করে গেছি। রাজনৈতিক দল বিএনপি বলেন, জামায়াত বলেন, অন্যান্য দল বলেন, তারা তাদের মতো করে লড়াই করেছে। আর আমি লড়াই করেছি আমার মতো করে ‘আমার দেশ’ পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে। আমার লড়াই ছিল বুদ্ধিবৃত্তির লড়াই, আমার লড়াই ছিল কালচারের লড়াই।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে ফ্যাসিজমকে কবর দিয়েছেন। এক সময় বাংলাদেশের যে তরুণরা কিউবা বিপ্লবের নায়ক চে গুয়েভারাকে বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করতো, সেই তরুণরা এখন আবু সাঈদকে তাদের আদর্শ হিসেবে জানে। বাংলাদেশের বিপ্লবের আইকনের নাম আবু সাঈদ। আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে ফ্যাসিস্ট পুলিশের উদ্যত রাইফেলের সামনে উদ্ভাসিত মুখে দাঁড়িয়ে শাহাদত বরণ করেছেন। তার এই মৃত্যু বাংলাদেশের জনগণকে যুগের পর যুগ অনুপ্রেরণা দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ২০০ বছর আগে তিতুমীর বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন। ১৮৩১ সালের অর্থাৎ প্রায় ২০০ বছর পরে আমরা শহীদ তিতুমীরকে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। আমি আশাবাদী আজ থেকে ২০০ বছর পরে আগামী প্রজন্ম আবু সাঈদের কথা বলে তিতুমীরের মতো গর্ব অনুভব করবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী আবু সাঈদ আমাদের কাছে বিপ্লবের আইকন হিসেবে থাকবেন।’
ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের কথা স্মরণ করে মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানবতাবোধের মহানায়কের নাম বলতে গেলে আমাদের মুগ্ধের নাম মনে পড়ে। এই উত্তরার রাজপথে এক সুদর্শন তরুণ পরম মমতায় রাস্তায় দৌড়ে বের হয়ে বলেছে পানি লাগবে ভাই? এই দৃশ্য মনে করলে আমি আবেগ ধরে রাখতে পারি না।’
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। শেখ হাসিনার সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে সারা দেশে ১২৪টি মামলা করা হয়। ২০১০ সালের জুনে প্রথম দফায় আমার দেশ বন্ধ করাসহ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা করা হয়।
বিমানবন্দরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমি ডা. শফিকুর রহমান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো: সেলিম উদ্দিন ও দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তর প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি খুরশিদ আলম প্রমুখ।
এছাড়া বিএনপি নেতা কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামীমসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।