ঢাকা, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি পুনর্গঠন ও সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি করেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। এ উপলক্ষ্যে পরিষদ আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটিতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মাধ্যমে সকল ক্যাডারের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিভিল সার্ভিসের বাইরে জনপ্রশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে হবে।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তথ্য বেতার ক্যাডারের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। সভায় তথ্য ক্যাডারের মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান, গণপূর্ত ক্যাডারের মো. হাফিজুর রহমান, কৃষি ক্যাডারের মো. আরিফ হোসেন, শিক্ষা ক্যাডারের ড. মো. মফিজুর রহমান, পশুসম্পদ ক্যাডারের শাহাদাত হোসেন সহ ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা জনাব আসিফ নজরুল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার কথা উল্লেখ করে বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা শুধু নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সেটা ছিল একটা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্ন এবং প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। বাংলাদেশে যেন আর কোনোদিন, কখনও যেনো ফ্যাসিবাদী শাসন জাঁকিয়ে বসতে না পারে, সেটা রোধ করতে কী কী সংস্কার প্রয়োজন সে লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কমিশন কাজ করবে বলে তিনি জানান। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের পরামর্শ সংস্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংস্কার কমিশনের কর্মপদ্ধতির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজুল আলম বলেন, দেশের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদী শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ ছিল। এখন জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি যেমন আছে, তেমনি গত ১৫ বছরে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো জনগণের স্বার্থে কাজ করতে পারছে না। এগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বল হয়, গভীর উদ্বেগের সাথে পরিষদ লক্ষ্য করেছে যে, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ যে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, সেখানে ২৫টি ক্যাডারের কোনও সদস্য নেই। বরং কমিশন প্রধানসহ ছয়জন সদস্য একটি ক্যাডারের, যারা সিভিল প্রশাসনের বৈষম্য সৃষ্টিকারী। এছাড়া ইতোপূর্বেও বৈষম্য নিরসনে তাঁদেরকে দিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছিলো, এবং তাঁরা সেই সুযোগে বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করেছেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, বিগত ১৫ বছরে যারা জনপ্রশাসনে থেকে ভোটারবিহীন নির্বাচনে সহযোগিতা করেছেন, যারা এদেশের জনসেবা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছেন নিজস্ব স্বার্থে, যারা প্রশাসন ব্যবস্থাকে চরম কেন্দ্রীভূত করে সকল ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করেছেন, তাদেরকেই কমিশনের সদস্য করা হয়েছে; যেনো এদেশের উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য ব্যতীত আর কারো কোনো ভূমিকা নেই। এ কারণেই স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে জনসেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বস্তুত বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় পেশাদারত্বের কোন মূল্য দেওয়া হয়নি, এখনও হচ্ছে না।
তারা বলেন, সময় এসেছে এসব চিন্তা করার এবং ভ্রান্তনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। কিন্তু এসব চিন্তা যেন করা না যায়, জনসেবার প্রকৃত রূপরেখা যেন প্রকাশ না পায়, সে জন্য একটা স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশে সব সময় ক্রীড়ানকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
তাদের মতে, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ দেশের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে ২৫টি ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ২৫টি ক্যাডারে প্রায় ৫৩ হাজার কর্মকর্তা চাকরি করেন। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জনসেবা এ ২৫টি ক্যাডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই ২৫টি ক্যাডারকে পাশ কাটিয়ে শুধু একটি ক্যাডারের প্রতিনিধি দিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্ভব নয়। তাই একটি আধুনিক, গতিশীল সেবা ব্যবস্থাপনা চালু করতে আন্তঃক্যাডারের মতামত গ্রহণের জন্য এবং নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।