মনিরুল ইসলাম ঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষ সব সময় আত্মত্যাগ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। ১৯৭১ সালে আমরা যখন স্বাধীন হয়েছি, তখন আমরা ধরে নিয়েছিলাম- আমরা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সমাজ পাবো। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, সেদিন যারা গণতন্ত্রের দাবিদার ছিলেন, সেই আওয়ামী লীগের হাতেই গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে। তারা ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে, একথা আমাদের ভুললে চলবে না। একথা বারবার মনে করতে হবে।
আজ শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপি আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এ কথা বলেন।১৭ বছর ধরে গণতন্ত্রের সংগ্রামে বীর শহীদের স্মরণে ‘স্মরণ সভা’ করেছে বিএনপি।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেলা আড়াইটা থেকে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সভাস্থলে আসেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে যায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। শহীদ মিনারের আশপাশে গণতন্ত্রের সংগ্রামে শহীদদের ছবি, নাম, ঠিকানাসহ ফেস্টুন টানানো হয়। এ সময় জুলাই-আগস্টের আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে নিহত, আহত এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের আলোকচিত্র তুলে ধরেন স্বজনরা। ভুক্তভোগী কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনেকে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বক্তব্যের মাঝে মাঝে গান পরিবেশন করা হয়, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান নিয়ে মূকাভিনয়ও প্রদর্শন করা হয়।
১৭ বছর ধরে গণতন্ত্রের সংগ্রামে বীর শহীদের স্মরণে ‘স্মরণ সভায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের খোঁজ এবং হত্যা ও খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনরা। একইসঙ্গে এ সময়ে বিএনপি’র ৬০ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার মামলা অতিদ্রুত প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি। পাশাপাশি এই ১৬ বছর ধরে এবং বর্তমান আন্দোলনে পুঙ্গ ও নিহত সকলকে রাষ্ট্রের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপি আয়োজিত স্মরণ সভায় ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজন এবং দলের পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
স্মরণ সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, আজকে আমার যে সমস্ত ভাইয়েরা পঙ্গু হয়েছেন, আজকে যারা নিহত হয়েছেন- এই ১৬ বছর ধরে এবং বর্তমান আন্দোলনে, তাদের সকলকে রাষ্ট্রের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাদের ভাতা দিতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরি ব্যাপার। শুধু অনুষ্ঠান করলেই হবে না, সরকারের কাছে জোরে তুলে ধরতে হবে। এই ১৬ বছর ধরে আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি, অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়িত হচ্ছি। ৭০০ গুম হয়েছে, আয়নাঘর হয়েছে। এখনো মায়ের ডাক ছেলে মেয়েরা কেঁদে বেড়াচ্ছে। ছোট্ট শিশুরা তার বাবা-মাকে খুঁজছে। সেই মানুষগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার মামলা। ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা। এই কয়েক বছরে, অবিলম্বে অতিদ্রুত এই সমস্ত মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে একটা সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে আমরা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেয়েছি। এই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা আকাশচুম্বি। জনগণ মনে করে এবং প্রত্যাশা করে- এই সরকার এমন একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দিবে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে এমন একটা জায়গায় আনবে যে, সত্যিকার অর্থে একটি অর্থবহ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা সবাই বলছি যে, আমরা স্বাধীন হয়েছি। হয়তো স্বাধীন হয়েছি, হয়তো হয়েছি। কিন্তু এখনো চতুর্দিকে তাদের চক্রান্ত তারা বিভিন্নভাবে ছড়াচ্ছে এবং আমাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আজকে আমাদের যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা হচ্ছে, ইস্পাত কঠিন ঐক্য। যে ঐক্য নিয়ে আমরা দীর্ঘ ১৬ বছর লড়াই করেছি। সেই ঐক্যকে অটুট রাখা এবং কোনো মতেই তাদের চক্রান্তে পা না দেয়া।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, গণতান্ত্রিক সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। আজকে আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি, জুলাই এবং তারও পূর্ব ১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষ লড়াই ও সংগ্রাম করেছেন এবং প্রাণ দিয়েছে। আমি অভিবাদন ও স্যালুট জানাই, এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সেই সমস্ত সৈনিকদেরকে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। আমি অভিবাদন জানাই, যে সমস্ত ভাই আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। আমি অভিবাদন ও স্যালুট জানাই, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে, যিনি কোনোদিন গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপস ও মাথানত করেননি। দীর্ঘ ৬ বছর কারাভোগ করার পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে তিনি মুক্ত হয়েছেন। আমি অভিবাদন জানাই, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। যিনি মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত হয়ে বিদেশে থেকেও এই দীর্ঘ বছরগুলোতে এখানে গণতন্ত্রের সংগ্রাম করেছেন, সহযোগিতা করেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন।